সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০

বাসুদেব দাস






শব্দ

 

 উদয় কুমার শর্মা

 

 মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস





        প্রতিটি শব্দই আমার



        কাউকে কিছু দিতে পেরেছে কি



        আমার মর্যাদা চাই না



      



        মনের মধ্যে একটা আতসী কাঁচ রেখে



        শব্দ দিয়ে আড়াল থেকে দেখতে চাই-



        রোদ,মাটি,মানুষ



        কিছু নিরীক্ষণ,পুননির্মাণ,জীবনের যত অসুখ



        তার কিছু সমাধান,



        একটি শব্দের অন্য অর্থ বের করে



        অর্থগুলি সংশ্লেষিত করতে চাই –



        সীমা না মানা ভাষায়



        যেখানে অর্থ গলে যেতে যেতে



        অর্থপূর্ণ সংযোগ ঘটে







        হাসিভরা মুখ একটার আড়ালে



        লুকিয়ে রাখা বেদনার অর্থ



        অনুবাদ করা কঠিন,



        বিদায় মানেও বেদনা



        ব্লুটুথের দ্বারা যাকে পাঠাতে পারি না



        হাসি কান্নাকে ডাউনলোড করতে পারি না



        বন্যা বিস্ফোরণ অনাথ করে মারা



        নাবালকদের বোবা চাহনিকে



        কী বলবে,কীভাবে দেখবে আমার শব্দ



      



        কোন শব্দে আমার



      



        তিনটে করে শীতের উত্তাপ থাকলে







        সমস্ত যন্ত্রণাকে সহ্য করার নামই



        সাহস



        সমস্ত স্বপ্নকে আশায় রূপান্তরিত করার নামই



        প্রেম



      



        আমার এইসব শব্দ অন্যকে কী দিতে পেরেছে



        তার দ্বারাই আমি বেঁচে থাকব







সীতার গীতিকা

 

        জ্যোতিরেখা হাজরিকা

 

        মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস





        পথে ঘাটে কদাচিৎ কোথাও থাকে একজন প্রেমিক রাবণ এবং



        সত্যে প্রতিষ্ঠিত বলে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ছদ্মবেশে ঘরে ঘরে থাকে একেকজন রাম



        ধীর-স্থির,শান্ত-শিষ্টের ভুয়া পোশাক পরা রাম এবং



        রাক্ষসের সমস্ত লক্ষণ নিয়েও চূড়ান্ত প্রেমিক রাবণের যুগে যুগে সংঘাত



        যুগে যুগে সংঘাত প্রেম এবং প্রতিহিংসার



        বৈধ এবং অবৈধের 







        আর সীতা?







        এভাবেও তো একবার আমরা সীতাকে ভেবে দেখতে পারিঃ



        একটি ঘরের একটি বিলাসি আসবাব না ক্রমশ পুরোনো হয়ে আসা



        একটি আলমারি,একটি পুরোনো সোফা –যাকে ফেলতে গিয়েও ছুঁড়ে ফেলতে পারি না



        যার সমস্ত প্রয়োজন শেষ হয়ে এসেছে অথচ উপেক্ষা করা যায় না



        নিজে থেকে মৃত্যু এসে স্পর্শ না করা পর্যন্ত



        মনে করা হল –



        আজকের সীতা লাজুকিলতা নয় –ছুঁলেই মূর্ছা যাওয়া



        রামের অগ্নি পরীক্ষর তুলাদণ্ডে বারবার উঠায় কিসের গরজ সীতার



        কতটা প্রেম বুকে থাকলে সইতে পারে রামের সমস্ত বঞ্চনা



        আজকের সীতা তা ভালো করেই জানে



        আজকের সীতা বিনা বাক্যে পরে না বক্লল,নতশিরে মানে না স্বামীর সঙ্গে বনবাস



        মায়ামৃগের মোহে পড়ে বন্দি হয় না রাবণের অশোক বনে



        আজকের সীতা হাতের তালুতে মেপে নিতে জানে প্রেম এবং প্রতারণার দুটো মুদ্রা







        হে বিজ্ঞজন,আপনাকে জিজ্ঞেস করছি –



        এধরনের মানসিকতার সীতাকে গ্রহণ করবে কি সমাজ?



        আজকের রাম বারবার সীতাকে জন-অরণ্যে ত্যাগ করতে পারে,কোনো দোষ নেই



        আজকের রাম বারবার পদাঘাত করতে পারে সীতার প্রেমাঞ্জলি,কোনো খেদ নেই



        আজকের রাম বন্ধ করতে পারে সীতা অযোধ্যায় ফিরে আসার সমস্ত পথঘাট,সমাজ অন্ধ



        আজকের রাম বারবার করতে পারে সীতার সততার অগ্নি পরীক্ষা,সমাজ নীরব দর্শক



        আজ রামের কাছে সীতা নয় প্রেমের প্রতীক,কেবল স্থূল যৌনতা-



        এটা দিনের আলোর মতো সত্য



        নারীর যোবন কেনার জন্য চাই কেবল অর্থ-প্রাচুর্য



        পথে-ঘাটে নারীর দুদিনের প্রেম কেনার জন্য চাই কিছু যশ-নাম



        আর কিছু সামাজিক স্বীকৃতি



        আর সেইপথে রামের জীবনে যে নারী আসবে



        সে কি সীতা হতে পারে?







        রাবণের প্রেম সত্যি-সীতাও জানত সে কথা



        নাহলে কি অযোধ্যায় ফিরে এসে আঁকতেন রাবণের ছবি



        এবং রামের ছলনাকে বারবার প্রেম বলে ভুল না করলে



        সগর্ভা সীতার বনবাস হত কি?



      



        রামের সঙ্গে সীতার সম্পর্ক  প্রথম থেকেই ছিল ভুয়া ,হরধনু ভাঙ্গার নামে কেবল প্রহসন



        তাতে প্রেম ছিল না,ছিল সামন্তকে হারিয়ে জেতার আনন্দ



      



        যুগে যুগে নারীকে সীতার সহনশীলতার পাঠ শেখানোর জন্য অগ্রণী সমাজ জানে কি



        আজ সেই রাম ও নেই ,অযোধ্যাও নেই…



          



      



 



মানুষ হওয়ার চেয়ে গাছ হওয়াই ভালো

 

        অনুপম কুমার

 

        মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস

 


        মানুষেরা গাছ



        এটাও একটা লজিক







        গাছ হওয়া সহজ



        যেভাবে সহজ-



        কবি হওয়া



        ডাক্তার হওয়া



        অফিসার হওয়া



        সহজ নয় কেবল



        গাছের ভেতরের মানুষ হওয়া



        মাঠের ভেতরের নদী হওয়া



      



        মানুষ হওয়ার চেয়ে গাছ



        হওয়াই ভালো



        নদী হওয়াই ভালো



        নদী হলেই বয়ে যেতে পারি



        মানুষ হলে



        কথা বলতে হয়



        প্রতিবাদ করতে হয়







        এখন কথা মানেই বিশৃঙ্খ্লা



        প্রতিবাদ মানেই বিশৃঙ্খ্লা



        ডাকের বচন



        ‘কথায় কথা কাটা যায় কথায় পুরস্কার পায়’







        বুদ্ধিমানরা কম কথা বলে



        কথা কম বললে



        আয়ু বাড়ে







        প্রিয় মাঠ



        তোর বুকের গাছগুলি মরেছে



        কঠিয়া জন্মাতে গিয়ে



        ঢেঁকীয়া জন্মেছে।    











        



      



        







      



               




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদকের কলমে

মাস আসে মাস যায়। বছর গড়ায় বুলেট ট্রেনের গতিতে। নিরীহ মানুষ, হাভাতে মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ থাকে তার নির্দিষ্ট ঘূর্ণি আবর্তে। পৃথিবীর...