সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০

অক্ষর কথা







ঘোর দুঃসময়। যতদূর চোখ যায় আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা। এক থেকে দুই, দুই থেকে চার হয়ে শত পেরিয়ে হাজারের কোঠায় তিরিশ, বত্রিশ, পঁয়ত্রিশ, আটত্রিশ প্রত্যেক সকালে লাফিয়ে লাফিয়ে সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। অসহায় মানুষের নাকের ডগায় রীতিমতো কাচকলা দেখিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক। এ সেই সকাল যা রাতের চেয়েও অন্ধকার।



অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না। আদ্যিকালের প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষ যখন শুধুমাত্র খাবার জন্য প্রাণীহত্যা করতে শুরু করেছিল, তখন সেও জানত না একদিন তার ভয়ংকর সভ্য উত্তরপুরুষদের আদিগন্ত বিস্তৃত লোভে ছারখার হয়ে যাবে সুন্দরী সবুজ নীল কমলা পৃথিবীর ভারসাম্য। মানুষ খাওয়ার প্রয়োজন ছেড়ে অকারণে নিজের সৌন্দর্য, বাসস্থানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য লক্ষ লক্ষ প্রাণ নিতে শুরু করে দিল। আকাশ, হাওয়া, জল, জঙ্গল, পাহাড়, মরুভূমি সবকিছু নিজের বর্জ্যের দূষণে ভরিয়ে বিপন্ন করলো এই গোলকের অন্য সন্তানদের। প্রকৃতি অনেক সহ্য করার পরে একদিন নড়াচড়া শুরু করতেই হাহাকার পড়ে গেল সভ্য মানুষের মধ্যে।



এই ভয়াল মুহূর্তে যখন অক্ষর বৃত্ত চৈত্র ওয়েবজিন সংখ্যা প্রকাশিত হতে চলেছে, আমরা তখন জানি না নিকট বা দূর আগামীতে আমাদের ভবিষ্যৎ কি! উদ্বিগ্ন হয়ে আছি। এই করোনা বিপর্যয় তো শুধু রোগের জীবাণু শেষ হওয়াতেই শেষ হবে না। অর্থনৈতিক মন্দা ছেয়ে ফেলবে পৃথিবী। আগামী দিনগুলো ভয়ঙ্কর ধূসর। আসন্ন দিনের এক প্রারম্ভিক আভাস ইতিমধ্যেই পেতে চলেছে হতভাগ্য মানুষ। কোটি কোটি দিনআনা দিনখাওয়া মানুষ লংমার্চ করছেন রাস্তায় সমস্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাঁদের রুটিরুজির সর্বশেষ ঠিকানা হারিয়ে। আর কিছুদিন এভাবে চললে আরও এক ভয়াবহ মন্বন্তরের মুখোমুখি হব আমরা। তখন যাদের বিপুল পরিমাণে অর্থ সম্পদ জমেছে তীব্র শোষণের ফলে, সেই সম্পদও কোনো কাজে আসবে না।



তবুও মানুষ আশা ছাড়ে না। যত আক্রান্ত হয়েছে তাদের এক অংশকে আস্তে আস্তে জীবাণুদের কবল থেকে ছাড়িয়ে সুস্থ করে ফেরানোর প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে সফল হচ্ছে সেই অপ্রতিরোধ্য মানুষ। আমরা আজ সাহিত্যের আলোচনা করতে অক্ষম। আজ মানুষের বাঁচার লড়াই। এ লড়াই জিততে হবে। আমরা জানি আমরা জিতব, আমরাই জিতব, আমরা জিতবই। যেদিন সম্পূর্ণ সুস্থ মানসিকতার পৃথিবী পাব, কেবল সেদিনই ফের ফিরে পাব মানুষের জন্য সুস্থ সাহিত্যের পরিবেশ। ততদিন আসুন হাতে হাত বেঁধে থাকি। মানুষের জয় হোক।


মৌসুমী ভৌমিক




স্বপ্ন






যদি ভাল করে দেখো

দেখবে দরজা পেরিয়ে গেছি



তোমার শামিয়ানা ছুঁয়ে

      ছুঁয়ে গেছি তোমার চাঁদ

কিনেছি তোমার স্বপ্ন, বুকের চৌকাঠ



সারাদিন শুকনো পাতার অবয়বে

কী খুঁজছ?

আমি তো দাঁড়িয়ে

তোমার দরজা পেরিয়ে



নির্বিকার সময় পুড়তে পুড়তে

হেসে উঠবে......

      স্বপ্ন দেখি ----

বিশ্বজিৎ দেব




ফটোসিন্থেসিস








সারাদিন ফটোসিন্থেসিস শেষে মিটে যায়

পাতাদের ঋন, মিটে যায় শ্রাবণের জল

দরপত্রে লেখা কার্বন, শেকড়ের শ্বাস 



এ জেনেই নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে অশোকের কাঠ, শহরের মসৃন আসবাবের

মোহে তাকে নিয়ে যাচ্ছে করাতের শাণ



বাকলের সমবেদনারাও এ থেকেই

বিচ্যুত হয়, ঋতুর তারতম্য অনুযায়ী

উড়ে যায় বাতাসের আদ্রর্তার স্তর ...



মরশুমের শেষ অর্বুদগুলি তাই তাকে নিয়ে লেখা, নীলাকাশ তাকে নিয়ে লেখা

তাকে নিয়ে লেখা গোটা বকেয়ার মাস











প্রথা








প্রথাগত সবই থেকে যায়

থেকে যায় করাতের দাঁত

কাঠগুঁড়ো, ছন্দ ও অনুপ্রাস

শতনাম সনেটের নীচে

নিরক্ষর টেবিলেরাও থেকে যায়

প্রথাগত ......



তবু তুমি গান বলো, দূরে

গান শেষে পড়ে থাকে

শ্রাবনের সাপিনীর ছাল!

কৃপাণ মৈত্র




বড়দিন

                  






শ্মশান ধারের মাঠে মেলা লোক জমেছে। হাসি ঠাট্টা মজামস্তির ফোয়ারা উড়ছে। বুড়ি আজ গ্ৰামের ভিক্ষা ছেড়ে হাজির হয়েছে রঙ্গালয়ে ।বুড়ি কানে কম শোনে।চোখেও ভালো দেখে না  ।বুুড়ি বুঝতে পারছে না  কেন এত মানুষ শ্মশানেধারে  জমায়েত হয়েছে।  কেনই বা শ্মশানের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে  গান-বাজনা হাসিঠাট্টার আনন্দে সকলে মেতে উঠেছে  ।বুুড়ির   আবছা চোখে কত রঙিন মানুষ।  কত কত আয়োজন দিনটিকে  উপভোগ করার  জন্য।শ্মশানের আত্মারা  শান্তি ভঙ্গের  বিচার চাইবে না তো জীবমৃতদের কাছে।

     একটা গাছ ঠাওরে  তার তলায় বসেছে  বুড়ি।ফিনফিনে ঠান্ডা বাতাস বইছে।  শীতে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।  পরনের দীন পোশাকের সাধ‍্য কি উত্তরের বাতাসের অহংকে ঠেকায়। তুবুও বুড়ি

 নড়ে না। কীভাবে যেন বুড়ির বিশ্বাস জন্মেছে উদ্বৃত্তের আস্তাকুড় খুঁজে  ওরা নিশ্চয়ই  নাম কামাবার সুযোগ ছাড়বে না। বুড়ি মনটাকে স্থির করলো।  ভাবলো এত মানুষ, এত আগুন যখন  তখন ঠান্ডা যবর লাগার কথা নয়। বুড়ি যেখানে যায় সেখানে তো উষ্ণতার আদর জোটে না। বরং মানুষের মনুষ্যত্বকে অবমাননার সদর দরজা  দেখিয়ে দিয়ে তার পরমাত্মাকে  অবমাননা করে।

হট্টগোল ক্রমশ বাড়ছে। বুড়ির অশক্ত শ্রাবনকেও পীড়া দিচ্ছে।বুড়ি স্মৃতি হলটেও তো তার মেয়ে বেলার এমন বাঁধনছাড়া মজা মস্তির খবর পায় না।

   একজন এসে বলল ও ঠাকমা চলে যেও না যেন। কিছু না কিছু তো অবশ্যই বেশি হবে।

     বুড়ি বলে , হ্যাঁ বাবা , কুকুরগুলোর  সঙ্গে  আমাকেও ভাগ করে দিস ।তা বাবা  আজ কিসের উৎসব?

     ছেলেটি বলে, বড়দিন।

     বুড়ি অবাক হয়ে বলে।  বড়দিন! কই মালুম হচ্ছে না তো । এই তো সুজ্জি  উঠলো আর একটু বাদে যে  চোখের কোল জুড়ে আঁধার নেমে আসবে ।

   ছেলেটি বলে,  না না এ সে বড়দিন নয়।যিশুখ্রিষ্টৈর জন্মদিন।

   বুড়ি চালশে পড়া চোখে ফ্যালফ্যাল করে ছেলেটির দিকে তাকালে ছেলেটি বলে, সাহেবের জন্মদিন।

   বুড়ির দৃষ্টিতে কৌতূহল।  বুড়ি বলে ওরা না আমাদের গোলাম করে রেখেছিল। তবে বাবা সে ভালো ছিল ।পরের লাথি সওয়া যায় , নিজেরটা যে বড্ড বাজে ।

   ছেলেটি বলে, না না এ সে সাহেব নয়।

  বুড়ি বলে, তা বাবা ,রাম ঠাকুরের জন্মদিন ত কই এমন বড় দিন হল না ।অথচ ওই লোকটা অবহেলায় দিনটাকে বড় করে নিশ্চিন্তে বিছানায় পাঠাতে পারতেন।

    ছেলেটি বলে, রাম ঠাকুর!সে আবার কে !   

      বুড়ি মুখে হাসি ফুটে উঠল।বুড়ি কপালে জড়োহাত ঠেকিয়ে  বলে,  রামকেষ্ট ঠাকুর।  সারা জীবনের একটা ঘটনা ঘটবে না যেখানে না তার বাণী  তোমাকে পথ দেখাবে।

     ছেলেটি বলে, কে জানে হবে হয়তো।

    বুড়ি উঠে পড়ে। ছেলেটি বলে, ও ঠাকমা যেও না ।একটু রুখে যাও। মাছ,মাংস, মিষ্টি আরো কত কি। আমি না হয় তোমার জন্য সকলের আগে খাবারটা নিয়ে আসব।

   বুড়ি হনহনিয়ে হাঁটতে শুরুু করলে ছেলেটি বলে, কী হলো ঠাকমা চলে যাচ্ছ যে বড়।

   বুড়ি দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে, শ্মশান জাগিয়ে শব্দের এত বেলাল্লাপনা  যদি তোদের বড়দিন হয়, তাহলে রাম ঠাকুরের জন্মদিনকে  তোরা বড়দিন করিস না।

   বুড়ি অস্তায়মান সূর্যকে প্রণাম করে বলে, রাম ঠাকুর, এদের ক্ষমা করো।এরা জানে না এরা কী করছে।

কৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর




রেশটুকু





বৈশাখ মাস। বাইরে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে।

  

---এ তুই বউয়ের গায়ে হাত দিয়েছিস-- থানার মেজোবাবু, সবচেয়ে রাগী পুলিশ অফিসার ইকবালের চুলের মুঠি ধরে ঝাকড়াতে ঝাকড়াতে বলল।

--হ্যাঁ স্যার।

ইকবাল শান্তভাবে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। ও জানে ওর স্ত্রী মানে মিলির মামা লালবাজারের বড়ো অফিসার। তাই ব্যাপারটা অনেকদূর এগোবে।

--দেখে তো ভদ্র ফ্যামিলির, এডুকেটর মনে হচ্ছে, তা গায়ে হাত দিলি কেন?

--স্যার। কত করে একটা রবীন্দ্র সংগীত শোনাতে বললাম শোনালে না।আমি ওর গান শুনেই বিয়ে করেছিলাম...আর কিচ্ছু...



ঝড়, বৃষ্টি ক্রমশ ম্রিয়মাণ হতে হতে একসময় সম্পূর্ণ থেমে গেল। পশ্চিমাকাশে তখন উজ্জ্বল আভাটুকু মুছে গেলেও... হালকা রেশটুকু রয়ে গেছে...

                                       


শ্যামল সরকার




টোপ


    



পিল পিল করে ছুটছে কাতারে কাতারে মানুষ ৷ পথ জুড়ে কেবল অফুরান মাথা ৷ রোদ্দুরে পুড়ে যাচ্ছে মাথা ও মন ৷ তবুও চলেছে মানুষ ৷ চলতেই হবে ৷ দলপতিরা সামনে রেখেছেন সুন্দর স্বপ্ন  ----- মুক্তি ৷ মেহের বিবি জিজ্ঞেস করল শক্ত করে হাত ধরে রাখা স্বামী মোক্তার আলীকে ----- আচ্ছা, আমরা কেন যাচ্ছি ? কোথায় ?

বৃদ্ধ মোক্তার হাঁফাতে হাঁফাতে বলল ---- বাঁচতে ৷

------- সেটা কোথায় ?

------- সামনেই কোথাও ৷



    বেশীক্ষণ হাঁটতে হল না ৷ লুটিয়ে পড়ল মোক্তার রাজপথে ৷ মেহের বিবি চিৎকার করে জড়িয়ে ধরল স্বামীকে ৷ কারো থামার সময় নেই ৷ অফুরান ছুটন্ত মানুষের পায়ের তলায় পিষে গেল প্রবীন দম্পতি ৷



   মিছিল চলছে ৷ সামনেই মুক্তি ৷ শাদা ধপধপে, গোলগাল, বরশির গায়ে বিঁধে থাকা একখন্ড সুন্দর মুক্তি ৷

বাসুদেব দাস






শব্দ

 

 উদয় কুমার শর্মা

 

 মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস





        প্রতিটি শব্দই আমার



        কাউকে কিছু দিতে পেরেছে কি



        আমার মর্যাদা চাই না



      



        মনের মধ্যে একটা আতসী কাঁচ রেখে



        শব্দ দিয়ে আড়াল থেকে দেখতে চাই-



        রোদ,মাটি,মানুষ



        কিছু নিরীক্ষণ,পুননির্মাণ,জীবনের যত অসুখ



        তার কিছু সমাধান,



        একটি শব্দের অন্য অর্থ বের করে



        অর্থগুলি সংশ্লেষিত করতে চাই –



        সীমা না মানা ভাষায়



        যেখানে অর্থ গলে যেতে যেতে



        অর্থপূর্ণ সংযোগ ঘটে







        হাসিভরা মুখ একটার আড়ালে



        লুকিয়ে রাখা বেদনার অর্থ



        অনুবাদ করা কঠিন,



        বিদায় মানেও বেদনা



        ব্লুটুথের দ্বারা যাকে পাঠাতে পারি না



        হাসি কান্নাকে ডাউনলোড করতে পারি না



        বন্যা বিস্ফোরণ অনাথ করে মারা



        নাবালকদের বোবা চাহনিকে



        কী বলবে,কীভাবে দেখবে আমার শব্দ



      



        কোন শব্দে আমার



      



        তিনটে করে শীতের উত্তাপ থাকলে







        সমস্ত যন্ত্রণাকে সহ্য করার নামই



        সাহস



        সমস্ত স্বপ্নকে আশায় রূপান্তরিত করার নামই



        প্রেম



      



        আমার এইসব শব্দ অন্যকে কী দিতে পেরেছে



        তার দ্বারাই আমি বেঁচে থাকব







সীতার গীতিকা

 

        জ্যোতিরেখা হাজরিকা

 

        মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস





        পথে ঘাটে কদাচিৎ কোথাও থাকে একজন প্রেমিক রাবণ এবং



        সত্যে প্রতিষ্ঠিত বলে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ছদ্মবেশে ঘরে ঘরে থাকে একেকজন রাম



        ধীর-স্থির,শান্ত-শিষ্টের ভুয়া পোশাক পরা রাম এবং



        রাক্ষসের সমস্ত লক্ষণ নিয়েও চূড়ান্ত প্রেমিক রাবণের যুগে যুগে সংঘাত



        যুগে যুগে সংঘাত প্রেম এবং প্রতিহিংসার



        বৈধ এবং অবৈধের 







        আর সীতা?







        এভাবেও তো একবার আমরা সীতাকে ভেবে দেখতে পারিঃ



        একটি ঘরের একটি বিলাসি আসবাব না ক্রমশ পুরোনো হয়ে আসা



        একটি আলমারি,একটি পুরোনো সোফা –যাকে ফেলতে গিয়েও ছুঁড়ে ফেলতে পারি না



        যার সমস্ত প্রয়োজন শেষ হয়ে এসেছে অথচ উপেক্ষা করা যায় না



        নিজে থেকে মৃত্যু এসে স্পর্শ না করা পর্যন্ত



        মনে করা হল –



        আজকের সীতা লাজুকিলতা নয় –ছুঁলেই মূর্ছা যাওয়া



        রামের অগ্নি পরীক্ষর তুলাদণ্ডে বারবার উঠায় কিসের গরজ সীতার



        কতটা প্রেম বুকে থাকলে সইতে পারে রামের সমস্ত বঞ্চনা



        আজকের সীতা তা ভালো করেই জানে



        আজকের সীতা বিনা বাক্যে পরে না বক্লল,নতশিরে মানে না স্বামীর সঙ্গে বনবাস



        মায়ামৃগের মোহে পড়ে বন্দি হয় না রাবণের অশোক বনে



        আজকের সীতা হাতের তালুতে মেপে নিতে জানে প্রেম এবং প্রতারণার দুটো মুদ্রা







        হে বিজ্ঞজন,আপনাকে জিজ্ঞেস করছি –



        এধরনের মানসিকতার সীতাকে গ্রহণ করবে কি সমাজ?



        আজকের রাম বারবার সীতাকে জন-অরণ্যে ত্যাগ করতে পারে,কোনো দোষ নেই



        আজকের রাম বারবার পদাঘাত করতে পারে সীতার প্রেমাঞ্জলি,কোনো খেদ নেই



        আজকের রাম বন্ধ করতে পারে সীতা অযোধ্যায় ফিরে আসার সমস্ত পথঘাট,সমাজ অন্ধ



        আজকের রাম বারবার করতে পারে সীতার সততার অগ্নি পরীক্ষা,সমাজ নীরব দর্শক



        আজ রামের কাছে সীতা নয় প্রেমের প্রতীক,কেবল স্থূল যৌনতা-



        এটা দিনের আলোর মতো সত্য



        নারীর যোবন কেনার জন্য চাই কেবল অর্থ-প্রাচুর্য



        পথে-ঘাটে নারীর দুদিনের প্রেম কেনার জন্য চাই কিছু যশ-নাম



        আর কিছু সামাজিক স্বীকৃতি



        আর সেইপথে রামের জীবনে যে নারী আসবে



        সে কি সীতা হতে পারে?







        রাবণের প্রেম সত্যি-সীতাও জানত সে কথা



        নাহলে কি অযোধ্যায় ফিরে এসে আঁকতেন রাবণের ছবি



        এবং রামের ছলনাকে বারবার প্রেম বলে ভুল না করলে



        সগর্ভা সীতার বনবাস হত কি?



      



        রামের সঙ্গে সীতার সম্পর্ক  প্রথম থেকেই ছিল ভুয়া ,হরধনু ভাঙ্গার নামে কেবল প্রহসন



        তাতে প্রেম ছিল না,ছিল সামন্তকে হারিয়ে জেতার আনন্দ



      



        যুগে যুগে নারীকে সীতার সহনশীলতার পাঠ শেখানোর জন্য অগ্রণী সমাজ জানে কি



        আজ সেই রাম ও নেই ,অযোধ্যাও নেই…



          



      



 



মানুষ হওয়ার চেয়ে গাছ হওয়াই ভালো

 

        অনুপম কুমার

 

        মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস

 


        মানুষেরা গাছ



        এটাও একটা লজিক







        গাছ হওয়া সহজ



        যেভাবে সহজ-



        কবি হওয়া



        ডাক্তার হওয়া



        অফিসার হওয়া



        সহজ নয় কেবল



        গাছের ভেতরের মানুষ হওয়া



        মাঠের ভেতরের নদী হওয়া



      



        মানুষ হওয়ার চেয়ে গাছ



        হওয়াই ভালো



        নদী হওয়াই ভালো



        নদী হলেই বয়ে যেতে পারি



        মানুষ হলে



        কথা বলতে হয়



        প্রতিবাদ করতে হয়







        এখন কথা মানেই বিশৃঙ্খ্লা



        প্রতিবাদ মানেই বিশৃঙ্খ্লা



        ডাকের বচন



        ‘কথায় কথা কাটা যায় কথায় পুরস্কার পায়’







        বুদ্ধিমানরা কম কথা বলে



        কথা কম বললে



        আয়ু বাড়ে







        প্রিয় মাঠ



        তোর বুকের গাছগুলি মরেছে



        কঠিয়া জন্মাতে গিয়ে



        ঢেঁকীয়া জন্মেছে।    











        



      



        







      



               




অনিমেষ মণ্ডল




স্বপ্ন আঁকি


                         



অস্তরাগের উদাস জলে

ভিড়হারা এই তোমার চোখে

                নদীর চড়ায় দৃষ্টি আঁকা...





বর্ষা মেঘের আঁচল ছুঁয়ে

প্রেম ভেসে যায় নদীর মত

               বাঁকের শেষে একলা দেখা...





ফাগুন হাওয়ায় চুল ভিজেছে

উথাল পাথাল পলাশ ফুল

              ভিতর ঘরে বন্ধ তালা...





হৃদয়ভাঙার স্মৃতির রেশ

শ্যাওলা রাঙা আদর বিষ

               যন্ত্রণাটা হয়নি বলা ...





ঘর গড়েছি নদীর পাড়ে

তোমার জন্য হাজার সাঁকো

            ‌ ঝাড় বাদলা আগলে রাখি...





নষ্ট প্রেমের দগ্ধ আবেশ

থাকুক পড়ে শেকল খুলে

              তোমার চোখেই স্বপ্ন আঁকি...

অনিমেষ মণ্ডল




হারিয়ে যাওয়া বসন্ত

 




আমার জীবনে বসন্ত ফিরে আসবে না আর কোনোদিন  তোমার উপহার দেওয়া সেই গীতবিতান, তাতে যত্নে লেখা “যত্ন করো” ।সেইদিন বুঝতে পারিনি কিসের যত্ন কার যত্ন ।বাইশ বছর পর আবার যখন  খুলে দেখলাম সব কেমন যেন আবছা ,তুমি যে পলাশ ফুলের পাপড়ি রেখেদিয়েছিলে সেটা এখনও রয়েছে ,শুধু পাপড়ির মধ্যে প্রাণ নেই ।এখন প্রশ্ন অনেক আসে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করিনা ।যত্নের ব্যাপারটা এখন আর বুঝতে অসুবিধা হয়না।





তোমার মনে আছে সেই দিনের কথাগুলো গীতবিতানের অক্ষরের আড়ালে আমাদের ছেলেমানুষি কাছে আসার তীব্র ইচ্ছা ,মনে পড়ে সেই ছাতিম তলা ,বড়ো  ঘন্টা ,সেই বটগাছ ,সেই সংগীত ভবন ।জানি নিশ্চয়ই মনে থাকবে কারন তোমার স্মৃতি প্রখর ।গানের প্রতিটি কথা তুমি মনে রেখে দিতে ,আমি শুধুই ক্যাবলার মত তোমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকতাম ।





সেইদিনের ঘটনাটা মনে পড়ে - হারমনিয়ামের রিড বসে গিয়েছিল ,সে কি কাণ্ড! হয়ত রেওয়াজ করতে না পারার রাগটা আমাকেই সইতে হয়েছিল ।সেই প্রথম তোমার সাথে বিয়ের খেলা , তোমার গলায় জড়িয়ে দিয়েছিলাম পলাশ ,তুমি তখন অন্য ভুবনে ব্যস্ত থাকতে । তারপর বাইশ  বাইশটা বসন্ত আমরা নিজেদের মত কাটিয়েছি নিজেদের রঙে সেজে উঠেছে জীবনের বসন্ত গুলো কিন্তু কই এখনো তোমার দেওয়া গীতবিতানের অক্ষর  আমাদের মাঝে সুর তোলে ।তোমার শেখানো অক্ষর, সুর  এখনো অনুরণিত হয় ।তোমার শেখানো জীবন বোধের কথাগুলো প্রতিমুহূর্তে মনে পড়ে ।তোমার সাথে আমার সম্পর্কটা কাউকে বলতে ভয় হতো পাছে কেউ তোমাকে খারাপ ভেবে বসে ।তবে কি জানো তো এতগুলো বসন্ত দূরে থাকলেও গাছে পলাশ ফুলের মেলা দেখলেই তোমার সাথে কাটানো বসন্ত গুলো মনে আগুন জ্বালায় ।সেই আগুনের ছোঁয়ায় নিজেকে পুড়িয়ে বার বার তোমার মনের বসন্ত হতে চাই ।





একদিন এই চিঠি  ঠিক তোমার কাছে পৌঁছবে ,তুমি পড়ে যত্ন করে ফেলে দেবে কারন বাইশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বসন্তের রং আর কোনো দিন ফিরে আসবে না ,শুধু স্মৃতির আলোকে জ্বলে থাকবে তোমার দেওয়া প্রথম চুম্বন আর গান শেখানোর অছিলায় কোপাইয়ের পাশে বসে অনুভূতির বিনিময় ।তাই ফাগুনে পলাশ পরব এলে প্রতিবছর একটি করে চিঠি লিখি ,আর নিজের অঙ্গে অঙ্গে বুলিয়ে তোমার উদ্দেশে ভাসিয়ে দিই  জীবন স্রোতে ।

অলোক পুষ্পপুত্র




আলেয়া

 




একাকী এগিয়ে যায় আলো

অন্ধকার লুকিয়ে রাখে পিঁড়ি

দিগন্ত খুঁজে পেলে মাটি

আলো ধরে স্বর্গের সিঁড়ি




আবির সাহানা




পর্যবসান

 




অবিন্যস্ত প্রশ্বাসে আক্ষেপ ঝরে যায় রোজ ;

প্রাপ্তির ভাঁড়ার পূর্ণ থেকে শূন্যগর্ভ ।

স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সূর্যের রঙেও বদল ;

পরিযায়ী স্বপ্নেরাও বাসা বদলায় কালিক বৈপরীত্যে ।

কপটতার বংশবিস্তার প্রবঞ্চকের মুখোশ জুড়ে ;

"তর" থেকে "তম"-তে উত্তরণের খেলায়

নির্লজ্জ রক্তক্ষয়ী উন্মত্ততায় ঘুণপোকা ।



শান্তি....শান্তি....শান্তি....



বাতাসে ধ্বনিত বাণীর প্রবেশ নিষেধ

গলিত জিঘাংসু দাম্ভিক কর্ণকুহরে ।

অস্পষ্ট অবয়বে অদূরস্থ অন্তিম প্রশান্তির মৃদুহাস ।

অস্থিচর্মসার জীবনবৃত্তান্ত ভূপতিত প্রেতভূমে

নীল অসুখের বিদ্রূপাত্মক উপসংহারে ।


রিদুওয়ান উদ্দিন





ভাগ্যের পরিহাস




হাজার -কোটি টাকার খেলা,

ছেলের দিন শুরু নেশাতে।

      আর কলম শেষ ভাই,লিখবো কিসে?

পরীক্ষা কাল আর মোমবাতি নিভে।

একটুখানি জ্বরের আভাস,

বিদেশ জমায় নিজের যানে।

       ভাবটা এমন মৃত্যু কি যে,

টাকায় তবে মরন ঝুঁকে?

মরছে দেখো পথের ধারে,

       আরে খাইতে পাই না,

         এই দেহে বুঝি ঔষুধ জোটে?

খাবার গন্ধে ঘুম আসে না,

          মুখের সাদ কি আর এত বোঝে?

তোমার বাড়ির সামনে অভুক্ত আমি,

        আর তোমার হাড্ডি কুকুর ছেড়ে।

কাপড় ছেঁড়া,নগ্ন আমি,

        তোমার রোজই পোশাক  জোটে।

তোমার স্বপ্ন আরো লুটার,

আমার স্বপ্ন -

আজ রাতে কি তবে মরন হবে?


রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০

গৌতম কুমার গুপ্ত




প্রহসন 




তুমি তো সোনা অন্তরীক্ষে আরূঢ় হয়েছো

হাত দিয়েছো নাবাল চাঁদে

অথচ আমাকে বলেছো থেমে যেতে আরোহণে

হয় নাকি!



ত্বকের বদল করে নিতে সময় লাগবে আলোকবর্ষ

এখনও জমে আছে বিদগ্ধ মেলানিন

রশ্মিরং ফিরে যাচ্ছে মাটিতে

পোড়াতে পারছে না এই শরীরী নিধি



নিরেট বাদামী হতে হতে থমকে যাচ্ছে ঘড়ি

কালাধিক রৌদ্র নিচ্ছি এই জৈবিক জিনে

ক্রোমোজমে জমে থাকা সমস্ত লবন পুড়তে পুড়তে

দই মাখামাখি চিনিলাবণ্য হলে

           ফোটাবো পুষ্পরচনা



মুখবিবরে গুহাপ্রদেশে লোভ রেখেছি ঝুলিয়ে

জানি ফিরে যাবে নধর পাললিক চাঁদ

ত্বকের অঞ্চলে ক্ষুধার প্রাবল্যে

পেয়ে যাবো অন্তরীক্ষে হাতের নাগালে

খুব করে মেতে উঠবো তখন মুদ্রা ত্রিভঙ্গে

নটরাজ হামি খাবে নষ্ট পুরুষ প্রহসনে









হাওয়া






হাওয়াকে ধরে আছি স্থির প্রজ্ঞায়

ব্যালকনির ধাতব বাতাসে

আপ্লুত এই শ্বাসমুহূর্ত



আর সব নিন্দার্হ ছিল

প্রাজ্ঞ আকাশ বাহুবলী সৌরতেজ

কথিত কাহিনীগুলি শ্রাব্য সুখকর নয়



অকাল চান্দ্রমুহূর্তে তুমিগন্ধে ভিড় বাড়ে

লোলুপ পৌরুষে মোহমুগ্ধ শ্রীময়ী রাত

সেখানেও আতরের গান চক্ষুর গ্লানি



ছুঁয়ে দেখি দেওয়ালের রক্তাপ্লতা বুভুক্ষু অনল

স্বেদবহুল চঞ্চলতায় অগভীর ফ্যালনা দৃষ্টি

মনস্ক হয়ে বুঝে যাই গতিবিধির নর্ম প্রলেপ



হাওয়াকে পারি না ফিরিয়ে দিতে

কথার টুকরো দেখার ভাঙা কাঁচ ছড়িয়ে যায়

রক্ত চলকে পড়ে বিশ্রস্ত লাগামে



সূদুরে আমার ছায়া মিলিয়ে যেতে থাকে

তবু হাওয়ার্নিভর থাকি প্রাণবায়ু ধর


সুদীপ ঘোষাল




পরশুরাম

 




নয় ছেলে আর পাঁচ মেয়েকে নিয়ে মিতা ও তার বর পাঁচবিঘে জমির আমবাগানে বেশ সুখেই ছিল। মিতার বর মিলিটারি বিভাগে কাজ করার সময় এক অত্যাচারী লম্পটকে মেরে জঙ্গলে পুঁতে ফেলেছিল। কেউ জানতে পারে নি। তারপর কয়েক বছর পরে চাকরি ছেড়ে তার শখের আমবাগানে চলে এল। একরাশ বৃষ্টিফোঁটার ঝাপটা লাগা সুখে সে মিতার সংসারে মেতে গেল। ছেলেরা ধীরে ধীরে বড় হল। একে একে তাদের বিয়ে হল। চাকরির সন্ধানে তারা চলে গেল বাড়ি ছেড়ে। মিতার বয়স    হল। তার বর চলে গেল পরপারের ডাকে।



আমবাগানে মেজ ছেলে, ছোট ছেলে কে নিয়ে মিতা শেষ বয়সে আনন্দে ছিল। বয়স পঁচাশির কোঠায় হল মিতার। তবু সে মুড়ি ভাজে, বাগান পরিষ্কার রাখে।



মিতা বেশ কিছুদিন ধরে তার এক টি ছেলে সনৎকে দেখতে পায় না। সব ছেলে মেয়েরা মায়ের সঙ্গে দেখা করে কিন্তু সনৎ কেন দেখা করে না। প্রশ্ন করে মিতা সব ছেলে মেয়েদের। কেউ বলে, মা আমি কি করে বলব তার কথা। আবার কেউ বলে, ওর ব্যাপার অই জানে, আমরা জানি না মা।



মিতার কেমন যেন সন্দেহ হয়। সে ভাবে, ছেলেটি কি মরে গেল?  আর দেখা করে না কেন। আবার ভাবে, হয়ত রাগ হয়েছে বলে আসে না। মিতার মনে প্রশ্নগুলো ভিড় করে আসে।



ময়ুরাক্ষীর ধারে বাড়ি মিতার। ছোট থেকেই এই নদীর বুকেই তার যত অভাব অভিযোগ ছুঁড়ে দেয়। ফাঁকা নদীর ধারে চেঁচিয়ে সে মন হাল্কা করত। আজ মিতার নদীর ধারে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই বাড়িতে বসেই কাঁদে আর নদীকে গোপন কথা বলে।



ছোট ছেলে ছিদাম মদ খাওয়া ধরেছে দাদা মরার পর থেকে। সংসার আর তার ভাল লাগে না। মায়ের কাছে বসে। মা তার হাতপর আংটি দুটি হাত দিয়ে দেখে। ছিদাম কথা বলে না। শুধু মায়ের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। মা, তার না বলা কথা কেমন করে বুঝে যায়। মা বলেন, ভাল করে সংসার কর। শরীরের যত্ন নিও। আর তারপরেই বলেন, হারে ছিদাম তোর দাদা সনৎ আর দেখা করে না কেন? 

ছিদাম কি করে বলবে, দাদা মারা গেছে ক্যানসারে। আর এক দাদা ভুগছে রোগে। কখন কি হয়, কেউ জানে না। আর মায়ের বয়স পঁচাশি হল কিন্তু মরার কোন লক্ষণ নেই। ছিদাম ভাবে, কেউ চায় না মা মরুক। কিন্তু দাদারা মরার লাইনে নাম লিখিয়েছেন। ছিদামের শরীরও ভাল নেই। মা পুত্রশোক পেলে বাঁচবেন না। কোনও ছেলে বলে না। ছিদাম ঠিক করে নিল, আজ সে বলবে মাকে সমস্ত ঘটনা। মা মরে যায় যাবে?  মরবে না বেঁচে যাবে। সে ভাবে, রাতে হেগে মুতে বিছানায় মাখামাখি। মদ খাই বলে পরিষ্কার করতে  পারি। আর কেউ মায়ের ঘরের দিকে আসে না। বৌ, ভাইঝি,ভাইপোরা কাজ নিয়ে থাকে। আবার রাধামাধবের মন্দির আছে। ছোঁয়াছুঁয়ির ব্যাপার আছে। এমতাবস্থায় কাউকে দোষারোপ করা যায় না।



ছিদাম ভাবে আজ বলবেই মাকে আসল ঘটনা। বাইরে একবার বেরিয়ে এল। কোঁচর থেকে প্লাষ্টিকের বোতল বের করে তরল পদার্থের সবটুকু গলায় ঢেলে দিল। তারপর আয়েশ করে একটা বিড়ি ধরাল।



ঘরে ঢুকতেই মা বলল,আয় ছিদাম এখানে বোস। এঘরে ছিদামই বেশি আসে। আর ছিদামের গায়ের গন্ধ মায়ের চেনা হয়ে গেছে। ছিদাম জানে, মা এবার প্রশ্ন করবে। ঠিক তাই। মা বললেন ,  বাবা ছিদাম, তুই বল সনৎ কোথায়। সে আসে না কেন?  আর কদিন ধরে ভোলাকে দেখছি না। কি হল তাদের।



ছিদামের নেশা ধরেছে।নেশার ঝোঁকে সে বলল,আরে মা শোন আসল কথা। সনৎদা দুবছর আগে মরে গেছে। আর ভোলাদা আজকালের মধ্যেই সেঁটে যাবে বোধহয়। তুমি বুড়ি হয়েছ বলে কেউ বলে না। আমি বলে ফেললাম। ক্ষমা করে দিও। তবে মা, এবার তোমার মরাই ভাল। আর বেঁচে থাকলে কষ্ট পাবে গো, বলেই ছিদাম বাইরে তালা লাগিয়ে চলে গেল।



সকাল সকাল উঠে ছিদাম মন্দিরে একটা প্রণাম করে মায়ের ঘরে তালা খুলে পরিষ্কার করবে বলে তৈরি হল। ছিদাম মায়ের গায়ে হাত দিল। মায়ের দেহ ঠান্ডা হয়ে গেছে।



সকলকে ডেকে আনল ছিদাম। মেজদা বললেন, ভাল হল বুঝলি ছিদাম। ছেলে মরার দুঃখটাতো পেল না। নাকি বল বৌমা।



নাতি নাতনিরা ঠাকুমাকে ভালবাসত। তার ফুলের মালা দিয়ে সাজাল।

ছিদাম একা তাকিয়ে থাকল মায়ের মুখের দিকে। সে দেখতে পেল, মা তাকে  যেন হেসে বলছে, তুই আমাকে মুক্ত করলি ছিদাম।

সম্পাদকের কলমে

মাস আসে মাস যায়। বছর গড়ায় বুলেট ট্রেনের গতিতে। নিরীহ মানুষ, হাভাতে মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ থাকে তার নির্দিষ্ট ঘূর্ণি আবর্তে। পৃথিবীর...