শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০

সর্বজিৎ কর্মকার








ভারতবর্ষ


.     

রাস্তার ধারের ডাস্টবিন থেকে যেদিন বাচ্চাবাচ্চাটাকে পাওয়া গেছিল সেদিন সকলের মধ্যে এক দূর্গা মন্দিরের পূজারী,  আর এক মসজিদের মৌলবী সাহেবও দেখতে গিয়েছিলেন ছেলেটিকে । সকলের মত তাদের মনেও সেদিন মায়া জেগেছিল বাচ্চাটার জন্য ।

পূজিরী কেঁদে বলেছিলেন - হা ঈশ্বর ! এরা মানুষ নাকি পাষাণ ! কোন মা পারে এভাবে নিজের সন্তানকে ডাস্টবিনে ফেলে যেতে!  নাড়ির টানকে এভাবে মিথ্যা করে দিতে পারল কীভাবে!

 মৌলবী সাহেবও আকাশের দিকে দুহাত তুলে বলেছিলেন- আল্লাহ রসূল;  এ কেমন ইনসান তুমি বানালে ? এদের ক্ষমা করোনা আল্লা ; এদের নসীবে তুমি জাহান্নুম লিখে দাও !

কিন্তু , স্নেহের বশবর্তী হয়ে যখন শিশুটিকে কোলে তুলে নেয় পাড়ার এক হিন্দু বাড়ির বউ , পূজারী ধমক দিলেন -

কার না কার বাচ্চা । নাম জানোনা , জাত জানোনা কোলে তুলে নিলে ! শিগ্গির নামাও , নাহলে দিয়ে দাও ওই মৌলবী সাহেবদের বিরাদ্রীর কাউকে , যারা মানুষ করবে ওকে !

শুনেই এক মুসলিম মহিলা এগিয়ে এলেন । বাচ্চাটার দিকে হাত বাড়াতেই গর্জে উঠলেন -  না ! আমাদের কেউ নেবেনা এই বাচ্চাটাকে ! না জানে কোন ঘরের , কোন বংশের পাপ !  নামিয়ে দাও ওকে ! পৌরসভার লোকেরা ওকে দিয়ে আসুক হাসপাতালে !

বাচ্চাটি অবিরত কেঁদেই যাচ্ছিল । সকলে মায়াভরা চোখে দেখছিল বাচ্চাটিকে । অনেকের চোখে জলও ছিল । কিন্তু , কেউ এসে তাকে কোলে তুলে নিচ্ছিল না । একটা ক্ষেপি এতক্ষণ লক্ষ্য করছিল এই সবকিছু । শেষমেষ ছুটে আসে সে । সকলকে টেনে সরিয়ে দিয়ে কোলে তুলে নেয় বাচ্চাটাকে । তারপর রাস্তার ধারেই বসে নিজের বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করে ।

পূজারী- মৌলবী দুজনেই হতবাক ।

কিরে বাচ্চাটা তোর নাকি কোথাও থেকে চুরি করে এনেছিস ? বল কে এই বাচ্চা ?

 ক্ষেপিটা হাসতে হাসতে শুধু বলেছিল - এ ভারতবর্ষ গো ! আমাদের ভারতবর্ষ !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদকের কলমে

মাস আসে মাস যায়। বছর গড়ায় বুলেট ট্রেনের গতিতে। নিরীহ মানুষ, হাভাতে মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ থাকে তার নির্দিষ্ট ঘূর্ণি আবর্তে। পৃথিবীর...