হারান
মাচানতলার বস্তিতে শুধু হাহাকার দেখে হারান। কে যে কি কাজ করে, কি খায় কে জানে? শুধু খাওয়া আর খাওয়ার জোগাড়ে দিন কেটে যায়।
- নে নে পা চালা। তখন থেকে বলছি। আর তুই চাল বাছতে সময় নিলি।
হারানের কথায় মুখ ঝামটা দেয় বিনি - অনেক হয়েছে। এবার তো চল।
হারান জানে ওর শরীর আর পেরে উঠছে না। ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর বিনি যে ক'টা চাল রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছে তাও কাঁকরে ভর্তি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে হারান বলে - মনে হয় আজ দেরি হয়ে গেল। ক'দিন ইস্কুলে মিডডে মিল দিচ্ছে না। গরমও পড়েছে খুব। আজ খুব বিক্রিবাটা হবে।
বিনিও চিন্তার সুর তোলে - তাই তো গো বাপ, সাহিল ফ্যাক্টরি থেকে আইসক্রিমও নিতে হবে। চলো, পা চালাও।
- মেয়ে আমার বড় হয়ে গেল। সব বোঝে।
মুচকি হাসে বিনি - তা আর হব না। দু মুঠো যোগাড় করতে তোমার শরীরের এই হাল। তাও আমাকে ছাড় নি।
- ছাড়ব কি রে, আমি ভাবছি উল্টো কথা। ওই স্কুলের ভেতরে তুই আর আমি বাইরে তোর রেজাল্টের অপেক্ষায়। আইসক্রিম বেচছে অন্য কেউ।
হাসবে না করেও হেসে ফেলে বিনি - কি করে হবে? কে আমরা তাই তো জানি না। কেউ যখন নিল না তুমি তো আমাকে কোলে তুলে নিলে। নাম দিলে বিনি।
খালি পা। তাই উঁ হঁ করে হারান গম্ভীর জবাব দেয় - আমারও তাই। কে যেন ডাকল হারিয়ে যাস না। তাই আমি হারান।
হাতের বাক্সটা আরো ভালো করে গুছিয়ে ধরে বিনি এগিয়ে যায়। হারান বলে - জানিস মা, এতে সুবিধা আছে। আমরা কে হিন্দু কে মুসলিম কেউ জানে না। ফলে আমাদের পূজো আচ্চা কিছু নেই। আমরা শুধু মানুষ। আমরা খেয়ে না খাওয়ার আর না খেয়ে খাওয়ার দাঙ্গা করি।
বলেই হাসির চোটে কাশি এসে যায় হারানের। লুঙ্গি ধরে বলে - জানিস, আর বোধ হয় লুঙ্গিতে হবে না। স্কুলে বাবুদের ছেলেরা কেমন তাকায়। কিন্তু কেউ ডাস্টবিনে ভালো একটা প্যাণ্টও তো ফেলছে না।
হারান দূরের দিকে তাকায়। বলে - দেখ তো মা। ওরা কি কোন মাপজোক করছে।
- হ্যাঁ।
- তাহলে আবার ঠিকানা বদল। যাচ্চলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন