সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১

বাসুদেব দাস

 

 

একটি সহজ কথার কবিতা

 

প্রজ্ঞানজ্যোতি

 

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ

 

পথে ঘাটে আবার ঘন ঘন টায়ার জ্বলছে,ঝন ঝন তরোয়াল বাজছে,পাথর বর্ষিত হচ্ছে

 

আমরা নিরীহ মানুষদের পেটের ভেতর হাত পা লুকিয়েছে।কী একটা ভয়ে বুকটা

 

কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

 

কিছুক্ষণ পরে টায়ারের আগুন নিভে যাবে সত্য।তবে ভয় হচ্ছে

 

বাতাসে ছড়িয়ে পড়া কালো ধোঁয়াগুলি বহুদিন অস্থির করে রাখবে মানুষকে

 

 

 

টায়ারের দাউদাউ আগুনের চেয়ে মাটির প্রদীপের ক্ষীণ শিখাটি ভালো।আসলে এই

 

সহজ কথাটি ভুলে যাবার জন্যই টায়ারের ধোঁয়া কলজে কালো করছে

 

পথের দুব্বোয় রক্ত পড়েছে,শিলের পাহাড় খসেছে এবং

 

ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ জিলির আওয়াজকে ছাপিয়ে দেওধনি রাতগুলিতে

 

বিষাদের রাগ জুড়েছে

 

 

 

তাই সহজ কথাটা এখন আমার আরও সহজভাবে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে

 

ভাইয়েরা-

 

কিছুক্ষণ পরে আমাদের সবাইকে একই রাস্তা দিয়ে যেতে হবে।কিন্তু

 

নাতিদের ফুলের মতো কোমল পায়ের জন্য রেখে যাব যে পথ

 

জ্বালিয়ে যাব কি সেখানে

 

টায়ারের আগুন...

 

রেখে যাব শিলের পাহাড়

 

ধারাল তরোয়াল…।

 

 

 

টীকা –

 

দেওধনি-অপদেবতা ভর করা মহিলা   

 

 

 

খরা

 

প্রজ্ঞানজ্যোতি

 

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস

 

   ‘হুদুমদেও,হুদুমদেও এক চলকা পানী দেও…’

 

 

 

   জলের খোঁজে সারা রাত হুদুমখুঁটির চারপাশে

 

   কৃষক পত্নীরা উলঙ্গ হয়ে নাচল

 

 

 

   তবু হুদুমদেওর মন গলল না

 

 

 

   জল নেই।জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা রোদে

 

   মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আতুর মাঠ

 

 

 

   আকাশেও জল নেই।সমস্ত জল

 

   জমে পাথর হয়ে গেছে কৃ্ষকের চোখে

 

 

 

   হুদুমদেও নারাজ।

 

   তিনি আর মানুষের কথা শুনেন না

 

 

 

   তাহলে কার কথা শুনবে হুদুমদেও

 

   কার কথা?

 

 

 

   ব্যাঙের কথা।

 

   ব্যাঙের কথা শুনবে হুদুমদেও

 

   ব্যাঙতো মানুষে্র মতো গাছগুলির শিকড় উপড়ে ফেলেনি

 

   আবর্জনায় পুঁতে ফেলেনি জলাশয়ের বুক

 

   অথবা কালো কালো ধোঁয়ায় পুঁতে ফেলেনি আকাশ

 

   তাহলে হুদুমদেও কেন শুনবে না ব্যাঙের কথা।

 

 

 

   ব্যাঙের ডাকে জেগে উঠবে হুদুমদেও

 

   মেঘ ডাকবে।বৃষ্টিতে জেগে উঠবে তৃষ্ণাতুর মাঠ

 

   এসো, এসো লক্ষ্মী মা, আঘোনাকা্‌ই,আষাঢ় যে যায়

 

   আজকেই পাততে হবে ব্যাঙের বিয়ে

 

   আষাঢ়ে ও যদি না ভিজে মাঠের বুক

 

   অগ্রহায়ণে পার ভেঙ্গে জমাট বাঁধা চোখের জল নেমে আসবে

 

 

 

   উপসংহারঃ

 

   এর পরে ব্যাঙের খোঁজে চারপাশে তালাশ চালাল সবাই

 

   কিন্তু কোথাও একটা ব্যাঙ খুঁজে পাওয়া গেল না

 

   ইতিমধ্যে গাছ লতার মতো জন অরণ্যে হারিয়ে গেল ব্যাঙেরা

 

    

 

       

 

 

 

আড়াল কথা


 


প্রজ্ঞানজ্যোতি


 


মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ

 

 

 

   শৈশবে একদিন

 

 

 

   ওপাশে যাস না বাবা

 

   ওটা গোঁসাইয়ের জলখাওয়া ঘাট

 

   ওপাশে পা রাখিস না

 

   ওটা গোঁসাই প্রভুর আসা-যাওয়ার পথ

 

   তোর নিশ্বাসের বাতাসে অস্পৃশ্য হবে গোঁসাই প্রভুর আকাশ

 

   তোর পায়ের ধুলোয় অস্পৃশ্য হবে গোঁসাই ঘরের বাতাস

 

   গোঁসাই অসন্তুষ্ট হবেন,পৃথিবী্তে প্রলয় নামবে

 

   রৌ রৌ নরকে স্থান হবে তোর

 

   তুই যে মাছ মাছ গন্ধ করা ডোমের জাত

 

 

 

   ইস তা কীভাবে হবে দিদা

 

   মা তো আমাকে সবসময় ডাকে

 

   ‘আমার গোঁসাই আমার গোঁসাই’বলে

 

 

 

   সময় গড়িয়ে গেল

 

 

 

   দেখলে চোখ ফুটবে বলে দিদা বলা পুঁথিগুলি

 

   আমরা একদিন সাহস করে মেলে দেখলাম

 

   আমাদের চোখ ফুটল

 

   আমরা বুঝতে পারলাম মানুষের ভণ্ডামি

 

   আমরা বুঝতে পারলাম শোষকের কারসাজি

 

 

 

   উচ্চ-নিচ পৃথিবী কেবল ভণ্ড মানুষের চালাকি

 

   আমরা থু থু দিই পাপের পৃথিবী্তে

 

 

 

   এখন জোর দিয়ে বলি

 

 

 

   ‘কুকুর শৃগাল গর্দভেরও আত্মারাম’

 

   ডোমের রক্তেও আছে একই ভগবান

 

   সমস্ত প্রাণিতে ঈশ্বর দেখা

 

   ও আমার সরল দিদা

 

   তুইই আসল গোঁসাই 

 

   তোকে আমার শতকোটি প্রণাম।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদকের কলমে

মাস আসে মাস যায়। বছর গড়ায় বুলেট ট্রেনের গতিতে। নিরীহ মানুষ, হাভাতে মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ থাকে তার নির্দিষ্ট ঘূর্ণি আবর্তে। পৃথিবীর...