সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১

সুমন ব্যানার্জী

বাংলা রাজনৈতিক কবিতার ভুবন ও মণিভূষণ ভট্টাচার্য

 

১.

 

   'ঝড়ের খেয়া' কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন যে - " 'যাত্রা করো,যাত্রা করো যাত্রীদল'/উঠেছে আদেশ - /'বন্দরের কাল হল শেষ।' "

 

      প্রথম মহাযুদ্ধের অগ্নিস্রাবী প্রেক্ষিতে রচিত এই কবিতায় ক্রান্তদর্শী কবি এক নতুন সময়কে প্রত্যক্ষ করছেন।'নূতন সমুদ্রতীর পানে' বেরিয়ে পড়ার আহ্বান।ঊনবিংশ শতকের আদর্শ সংস্কার ভেঙেচুরে দিচ্ছে নতুন জীবন তরঙ্গের অভিঘাত।

 

       প্রথম মহাযুদ্ধ ও তজ্জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতি গোটা বিশ্বের সমীকরণ বদলে দিয়েছিল।অর্থনৈতিক সঙ্কট,দারিদ্র পাশাপাশি দেশব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণ আন্দোলন, কমিউনিস্ট আন্দোলন নতুন শক্তি সঞ্চয় করে। এরপরেই আসে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আবারও এক মর্মান্তিক অভিঘাত। সাংস্কৃতিক জগতেও এর ব্যাপক প্রভাব এসে পড়েছিল।চিরায়ত প্রেম, প্রকৃতি ও ঈশ্বর নির্ভর ভাববাদ এবং রোম্যান্টিসিজম্'র বদলে শিল্প-সাহিত্য জগতের ধৃতিকেন্দ্রে চলে আসে সমাজ বাস্তবতার ধারণা।অর্থাৎ অতীত সময়ের সঙ্গে একটা গ্রন্থিচ্ছেদন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।ঠিক এই সময় থেকেই বাংলা সাহিত্যে রাজনৈতিকতা ও সমাজ-বাস্তবতার দর্শন বড় জায়গা করে নেয়। জীবনানন্দ-উত্তর বাংলা কবিতায় এক সর্বংসহ প্রতিভা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়।তাঁর হাত ধরেই বাংলা কবিতায় প্রবল হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক বাস্তবতা। জীবনানন্দের অতি-ব্যবহারে ধ্বস্ত রূপকল্প ও ইমেজকে ছেড়ে তিনি তৈরি করলেন এক কাব্যভাষা।কবিতাকে নিয়ে গেলেন একদম মাটির পৃথিবীতে।মুটে মজুর,শ্রমিক কৃষক,গণ অভ্যুত্থান,জীবন সংগ্রামের কথা উঠে এলো কবিতায়,যা বাংলা কবিতায় আগে কখনও আসেনি।বাংলা কবিতার আকাশে দেখা দিল এক নতুন দিগন্ত রেখা।ছন্দ,আঙ্গিক ও কবিতার ভাষা নিয়ে শুরু হল নিরন্তর নানা মাত্রিক পরীক্ষা।'পদাতিক','অগ্নিকোণ','চিরকূট' প্রভৃতি কাব্য এক অলৌকিক স্পন্দন জাগিয়েছিল গোটা জনমানসে।সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি আরও একজনের নাম এই প্রসঙ্গে প্রাতঃস্মরণীয় তিনি হলেন 'কবি কিশোর' সুকান্ত ভট্টাচার্য। বাংলা রাজনৈতিক কবিতার ধারাটিকে তিনিই লোকপ্রিয়তার তুঙ্গে বিন্দুতে নিয়ে যান।অকালে নির্বাপিত এই বিস্ময়কর কবি প্রতিভার হাত দিয়ে বেরিয়েছিল 'ছাড়পত্র','ঘুম নেই','মিঠে কড়া'র মত বই।যা বয়ে এনেছিল অনেক তরতাজা সম্ভাবনা, প্রতিশ্রুতি ও অনমনীয় অঙ্গী।              

 

২.

   "কাল যে বিপ্লবী ছিল আজ সে-ই মন্ত্রী হয়,

 

     মন্ত্রীত্ব গোয়ালে হয় বহুরূপী নেতা

 

     কাল যে ঘাতক ছিল আজ সে-ই প্রকল্প

 

     প্রণেতা।"

 

     কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্য'র কবিতা। যাঁর কবিতার আলোচনায় প্রায় উপেক্ষিত ও অকর্ষিত।এমন তীব্র ব্যঙ্গ,কৌতুক,শাণিত শ্লেষ এবং এমন নির্মেদ ভণিতাহীন উচ্চারণ বাংলা রাজনৈতিক কবিতার ধারায় খুব কমই চোখে পড়ে।সমাজে ঘটে চলা সীমাহীন ভন্ডামি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে মানুষ ও সমাজকে বিক্রয়যোগ্য পণ্য করে তোলার বিরুদ্ধে তাঁর কলম যেভাবে গর্জে উঠেছে তা মানুষের অন্তর্জগতকে জোরালো ধাক্কা দেয়।কবি তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে বলছেন দ্ব্যর্থহীনভাবে - "আমি কমিটমেন্টে বিশ্বাস করি।প্রত্যেকটি লোকই কমিটমেন্টে বিশ্বাস করে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে কমিটমেন্টটা কোন দিকে ?শাসক শ্রেণির দিকে,না শোষিত শ্রেণির দিকে ?...আমি নিপীড়িতদের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করি এবং তাঁদের কথা ভেবেই লিখি।সুতরাং তাঁদের প্রতিই আমার কমিটমেন্ট।" (রৈবতক,জুন,১৯৮৮)।

 

     'কয়েকটি কন্ঠস্বর' থেকে 'উৎকন্ঠ শর্বরী' পর্যন্ত পর্বে তিনি নিজের ভাবনার জমিটিকে ক্রমাগত কর্ষণ করে গেছেন।যা অনেক সংহত,পরিণত হয়েছে 'গান্ধিনগরের রাত্রি' কাব্যে পৌঁছে।আসলে গোটা ষাটের দশক থেকে তিনি রাজনীতির বাঁকগুলিকে লক্ষ করেছেন।এই সময় ভারত-চীন যুদ্ধ হয়েছে,খাদ্য আন্দোলন,গোটা বাংলা জুড়ে জোতদার শ্রেণির বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট গণ আন্দোলন, জরুরি অবস্থা অতঃপর সত্তরের দশকের সেই উত্তাল রাজনীতি যার ধৃতিকেন্দ্রে ছিল নকশাল অভ্যুত্থান।এরপর কমিউনিস্ট পার্টি একাধিক ভাগে বিভাজিত হয়।রাজনীতিতে আদর্শের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ক্ষমতা দখলের ঈপ্সা।তাঁর সঙ্গে বিশ্বায়ন ও বাণিজ্যায়নের হাওয়া এসে লাগে।সমাজে নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রে চলে আসে কর্পোরেট পুঁজি।সেই সময় যাঁরা অবিচল আস্থা রেখেছিলেন কমিউনিস্ট জীবনাদর্শের প্রতি তাঁদের সকলের কাছেই এই সময়টা হয়ে ওঠে একটা স্বপ্নভঙ্গের দশক।তাই অবদমিত আকাঙ্ক্ষা,ক্ষোভ, বিশ্বাস ভঙ্গের যন্ত্রণা, ধিক্কার এই সমস্ত কিছু উঠে আসতে থাকে কবিতায়।

 

    সময়ের ক্ষতচিহ্নিত সামাজিক ও রাজনৈতিক কবিতা বাংলায় কম লেখা হয়নি কিন্তু মণিভূষণের কবিতার মত এত সংবেদী ও প্রবল পরিবহন খুব কম কবিতাতেই এসেছে।'গান্ধিনগরের রাত্রি'র কবিতাগুলি সেই রকমই যেন খাপ খোলা তলোয়ারের মত।চারজন ব্যক্তির বক্তব্যকে তুলে ধরে একটি কবিতা লেখেন;যা আসলে পুঁজি সর্বস্ব সমাজ কাঠামোর শ্রেণি অবস্থানের দিকেই সব্যঙ্গ ইঙ্গিত -

 

"অধ্যাপক বলেছিল, দ্যাটস্ র-ঙ্, আইন কেন

 

তুলে নেবে হাতে ?

 

মাস্টারের কাশি ওঠে কোথায় বিপ্লবে,শুধু

 

মরে গেল অসংখ্য হাভাতে !

 

উকিল সতর্ক হয়, 'বিস্কুট নিইনি, শুধু চায়ের

 

দামটা রাখো লিখে।'

 

চটকলের ছুকুমিঞা, ' এবার প্যাঁদাবো শালা

 

হারামি ও.সিকে'।"

 

এই কাব্যের সবচেয়ে পতাকাস্থানীয় কবিতা 'একটি স্লোগানের জন্ম' -

 

"উলঙ্গ ছেলে/গুলমার্গ থেকে বিবেকানন্দ শিলা পর্যন্ত থর থর করে কাঁপিয়ে দিয়ে/ভারতবর্ষের সমস্ত দক্ষিণ বাহিনী নদীকে/বাঁ দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে/সমস্ত অস্ত্র কারখানা,বিমান,বন্দর,সমস্ত বেনামি জমির দলিল/পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়া, যৌন সাহিত্যে আগুন লাগিয়ে দিয়ে/বিশাল পর্বতমালা জলস্রোত মাঠ - ময়দানের সমস্ত/খরসান জমায়েতকে তিনটে শব্দের মধ্যে স্তব্ধ ভয়ঙ্কর তোলপাড় ক'রে/খাটিয়ার উপর লাথি মারতে মারতে তার/সুকেশিনী ধূর্ত সৎমাকে চিৎকার করে বললো/'ভাত দে হারামজাদী'।"

 

এই কবিতার সঙ্গে এক বাণবেঁধার বিন্দুতে এসে মিলে যায় শঙ্খ ঘোষের 'স্লোগান' ও জয়দেব বসু'র 'মায়াকোভস্কির শেষ সাতদিন' কবিতাটি।আসলে একটি কবিতা অন্য একটি কবিতা সৃজনের সময় কখন অনির্বাচিত আলোর মত কখনবা ধাত্রী হিসাবে কাজ করে।

 

৩.

 

  কবির ''দক্ষিণ সমুদ্রের হাওয়া'' কাব্যের 'দধীচি' কবিতায় পাই -

 

"কলম ছুঁড়ে দিয়ে ফরমটা ছিঁড়ে টুকরো

 

 টুকরো ক'রে সেক্রেটারির

 

মুখে উড়িয়ে দিয়ে চিৎকার ক'রে উঠলেন -

 

'স্কাউন্ড্রেলস, আমাকে এভাবে ইনসালট

 

করার মানে কী ?

 

আমি প্রাক্তন বিপ্লবী নই , এখনো বিপ্লবী।"

 

 

    বিপ্লবের জন্য দিন বদলের স্বপ্ন যাঁরা দু'চোখ ভরে দেখে ছিল তা হয়তো ব্যর্থ হয়েছে,চারিদিকে শুধু শূন্য আস্ফালন আর উন্মত্ততা তবু বুকের মধ্যে সেই বারুদ রয়ে গেছে।তিনি আজ যে ভারতবর্ষকে দেখছেন -

 

"আমি যখন বস্তির/গণতান্ত্রিক খাটা পায়খানায় লাইন দিতাম।/মা নিজের হাতে দেওয়া ঘুঁটে জ্বালিয়ে চা ক'রে দিতেন।/সেই স্যাঁতসেতে অন্ধকারে ধোঁয়াটে আগুনের সামনে/বসে থাকা মাকে আমার ভারতবর্ষ বলে মনে হতো।"

 

এই পৃথিবীকে নবজাতকের বাসযোগ্য করতে অপারগ যন্ত্রণাবিদ্ধ কবি লেখেন -

 

"পৃথিবীকে এই শিশুর বাসযোগ্য করা যাচ্ছে না বলেই/রাজনৈতিক গাড়লরা শিশুটিকেই এই পৃথিবীর যোগ্য করে তুলেছে।"(শিশুটি বেড়ে উঠছে)।

 

    'সুকান্ত ভট্টাচার্যকে খোলা চিঠি' কবিতায় লিখছেন যে - "তুমি যে ভরপুর প্রাণের আবেগে লেনিন হতে চেয়েছিলে -/সেই তাঁকে নিয়েও এখন ভাগ বাঁটোয়ারা চলে : ফলে -/ভাগের মা গঙ্গা পায় না,/...সব কিছুই পণ্য -/...ভিখিরি মেয়েটির চিত্রকল্প ,/নিঃস্বের ন্যাকড়া কিংবা পন্ডিতের মগজ,/এমনকী তোমার জন্মদিনও/পণ্য।"

 

     ধনতন্ত্রের বল্গাহীন বিস্তার মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে, স্বাভাবিক মূল্যবোধকে পণ্যায়িত করেছে।সবকিছুকে অর্থের নিক্তিতে মাপতে শিখিয়েছে।যাঁরা দিন বদলের স্বপ্ন দেখেছিল,কলম হাতে তুলে নিয়েছিল,মানুষকে উদ্বোধিত করেছিল তাঁদের ইমেজকে গ্রাস করেছে এই পণ্য সভ্যতা।আদর্শের মৃত্যু হয়েছে তার বদলে চলছে কদর্য স্থূল উল্লাস আর ভন্ডামি।সে সুকান্ত এই পৃথিবীকে নবজাতকের বাসযোগ্য করতে চেয়েছিলেন সেখানে আজ -"পৃথিবীকে এই শিশুর বাসযোগ্য করা যাচ্ছে না বলেই/রাজনৈতিক গাড়লরা শিশুটিকেই এই পৃথিবীর যোগ্য করে তুলেছে।" তাঁর 'কপাল' কবিতায় লিখছেন যে -" 'হঠাৎ হুঙ্কার দিলেন - 'মায়াকোভস্কির মত লিখুন।/কবিতায় জনগণের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে দিন।'.../আমি জানি আমার অক্ষম কবিতাগুলিই/আমার সবচেয়ে বড় শত্রু।/'কিন্তু কী করবো বলুন' - আমি/পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্রের মত হতাশ হয়ে /তাঁকে জানালাম - 'মায়াকোভস্কির নেতা/ছিলেন স্বয়ং,/লেনিন।আর আমার নেতা হলেন আপনি।'

 

     জনগণের মধ্যে থেকেই আসলে নেতা তৈরি হয়।সেই প্রকৃত নেতা যাঁর সঙ্গে মাটি ও মানুষের ঐকান্তিক টান।গণ আন্দোলনের মধ্যে থেকেই উঠে আসে লেনিন,ট্রটস্কির মত নেতা:যে কোন বুলি আওড়াবে না কথা বলবে সাধারণ মানুষের ভাষায়।তাই কোন জনপ্রিয় নেতাকে নয় , কবি নেতা হিসাবে গণ্য করেছেন একজন খেটে খাওয়া মানুষকেই।যে তাঁকে উজ্জীবিত করবে।তাই মায়াকভস্কির মত কবিতা লেখার দরকার নেই তাঁর।এখানেই তিনি মানুষের কবি।স্বদেশের প্রতি নিবিড় ভালোবাসাও কি মর্মরিত হয় না এই কবিতায় ?

 

৪.

 

      কবির একটি অসামান্য কবিতা 'পদ্ধতি'।একজন কবি কীভাবে মানুষের মনোজগতের বদ্ধমূল সংস্কারকে ভেঙে দিয়ে আনতে পারে নতুন জীবন তরঙ্গ,কীভাবে তাঁর সৃষ্টি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের শক্তিকে ইন্ধন জোগায় তাই এই কেন্দ্রীয় বিষয়।একজন মানুষ শুধু লেখে 'তার লেখা ভাবায় এবং জ্বালায়'।একদিন তাঁর ডান হাত কেটে নেওয়া হল।তখন সে বাঁ হাতে লেখা অভ্যাস করল।তখন সেটাও কেটে নেওয়া হল।তখন পাঠকরা বলল 'তুমি মুখে মুখে বলে দাও,আমরা লিখে নিচ্ছি।'সে সেটাই করল।খবর পেয়ে 'সরকারি জল্লাদ'রা তাঁর মুখের মধ্যে থু থু ছিটিয়ে গেল।তাঁর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হল 'দলা পাকানো ন্যাকড়া' ও 'সিমেন্ট' দিয়ে।তখন সেই লোকটি পাঠকদের ইশারায় বলল সমুদ্র তীরে যেতে সে ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে 'অন্তহীন বালি'র ওপর লিখবে।খবর পেয়ে 'ডালকুত্তারা' আবার নিঃশব্দে এসে তাঁর পা কামড়ে দিল।তখন সে শুধু হাসল বিরাট সমুদ্র সৈকতে।কারণ "এতদিনে তার জায়গায় তার চেয়েও বেশি/শক্তিশালী এবং দূরদর্শী/তিনজন লেখক/এসে গেছে।"

 

     একজন কবি কখন অস্ত্র ধরেন না তাঁর কলম হয়ে ওঠে অস্ত্রের চেয়েও বেশি তীক্ষ্ণ ও প্রভাবশালী।কোন রক্তপাতহীন ভাবেই সে প্রজন্মের পর প্রজন্মের চেতনায় জ্বালিয়ে দিতে পারে শুদ্ধসত্ত্ব প্রেরণার প্রদীপ।

 

    আসলে রাজনৈতিক কবিতা তো চির যৌবনের।যৌবন জরাসন্ধের দুর্গ ভেঙে ফেলে উড্ডীন করে চির নবীনের জয়ধ্বজা।তথাকথিত শুদ্ধতার পরিখা,নিষেধের কাঁটাতারে ছিন্নভিন্ন করে এগিয়ে যেতে চায় কবিরা।‌বাংলা ভাষায় যাঁরা রাজনৈতিক কবিতা লিখেছেন তাঁরা বেশির ভাগই সনাতন ছন্দের কাঠামোকে ভেঙে টানটান গদ্যে লিখেছেন।প্রাত্যহিক যাপনের ব্যবহৃত চেনা-জানা শব্দ, নিতান্তই সাধারণ মেঠো প্রবচন ও বাক্-প্রতিমা প্রয়োগেই অনবদ্য সব সৃষ্টি উপহার দিয়েছেন। বস্তুত এই আপাত অকাব্যিকতার মধ্যেই আছে মাটির পৃথিবীকে, বৃহত্তর জনজীবনের সংলগ্ন থাকার অঙ্গীকার।কোন মিস্টিক স্বপ্নলোকে বিচরণ করে নয়, প্রতিদিনের ঘাত-প্রতিঘাতে রক্তাক্ত মানুষের নিরন্তর উত্তাপকে ধরতে চেয়েছেন কবিতায়।তাই তো সময়ের ব্যঞ্জানায় ঋদ্ধ এই কবিতা হয়ে ওঠে ইতিহাসেরও প্রত্ন-আলেখ্য।আসলে এক কল্পনায় আচ্ছন্ন ইতিহাস।মণীন্দ্র রায়, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, গোলাম কুদ্দুস,রাম বসু,সিদ্ধেশ্বর সেন,অনন্য রায়,শঙ্খ ঘোষ, জয়দেব বসু,মল্লিকা সেনগুপ্ত, নবারুণ ভট্টাচার্য প্রমুখ কবিরা বাংলা রাজনৈতিক কবিতার মানচিত্রে নানা মাত্রায় ও বর্ণে কবিতা লিখে এই সম্ভ্রান্ত ঐতিহ্যকে সজীব ও বেগবান রেখেছেন।

 

    আজ এই শৃগাল অধ্যুষিত মৃত্যু উপত্যকায় যখন আমাদের বিশ্বাসের ওপর, সৃষ্টির ওপর অনর্গল রক্ত ঝরে পড়ছে,পুড়ে খাক হচ্ছি আগুনে তখন এই সব কবিতাই হয়ে উঠতে পারে সংগ্রামের রক্তপাতহীন আয়ুধ।রাজনৈতিক ঘটনা চিহ্নিত কবিতা শুধু সময়ের ক্ষতকেই দেখিয়ে দেয় না,সজোরে ধাক্কা দেয় বিবেককে।এখানেই তার সার্থকতা।হিংসার বদলে হিংসাকে নয় বরং ছড়িয়ে দিতে বলে ভালোবাসার পরাগ রেণু। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়'র কথায় -

 

"এসো আমরা আগুনে হাত রেখে

 

 প্রেমের গান গাই।"(মুখে যদি রক্ত ওঠে) ।।

 

 

                         (সমাপ্ত)

 

 

  

 

 

 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদকের কলমে

মাস আসে মাস যায়। বছর গড়ায় বুলেট ট্রেনের গতিতে। নিরীহ মানুষ, হাভাতে মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ থাকে তার নির্দিষ্ট ঘূর্ণি আবর্তে। পৃথিবীর...