ব্যর্থ রচনার ট্যাবলয়েড
যে আমার কাছে আসতে চায়, তাকে বলি ধীর পায়ে এসো
আবেগে অস্থির হলে সম্পর্ক দাড়িপাল্লায় চেপে বসে
নিক্তি মেপে ইশারা বুঝে নেয় একগুচ্ছ মানবিক বৃষ্টি
মনের শরীরে আঁকা হয় বারুদগন্ধ, মুঠো মুঠো রক্তস্বপ্ন।
যাপনকাল ধরে বেঁচে থাকা সম্পর্ক-গল্প, নানান চিত্রনাট্য
শীতের এই কুয়াসা ভোরে তীব্রতাকে আচ্ছন্ন করে …
গোপন হাতচিঠির মত নরম আগুন লুকিয়ে রাখে বুকপকেটে।
আশা নিরাশার বিকেলগুলো ক্রেডিট অ্যাকাউন্টে সংখ্যা বাড়ায়
নিজস্ব জিডিপির।
২)
কবিতার নৌকা জলে ভাসাতে গেলেই দেখি বারবার ডুবে যায়।
দুই পৃষ্ঠার কবিতার নৌকায় যতোগুলো ঢেউ দেওয়া যায়, দিয়েছি।
তবুও চলে না নৌকা, ভাসাতে গেলে সাথে সাথে ডুবে যায়,
কব্জি উচ্চতার এই নদীতে।
না … কলমের নিভ মোটা ছিলো না, কালি গাঢ় ছিলো না।
দুই পৃষ্ঠার একটা কবিতার নৌকা কতো শব্দের অভিমান বইতে পারে?
কবিতার নৌকা থেকে দশটি বিরুদ্ধ শব্দ কেটে দিয়ে দেখি—
নৌকাটি জলে ভাসে দিব্যি।
৩)
পৃথিবীর পেটে ক্রিমি হলে, আগ্নেয়গিরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে
উগড়ে দেয় যাবতীয় বদহজম।
আগ্নেয়গিরির এই উগড়ানো রোগে পৃথিবীর তৃষ্ণা পায়
শুকিয়ে যায় সমস্ত জলাশয়, সাগর- নদী, খাল-বিল
তুমুল তৃষ্ণার আকাশে মেঘ ঘিরে থাকে কাঁটাতার—
পৃথিবীর যাবতীয় আঙুরগাছে জিহাদি ফলে,
জলপাইগাছে ফলে বেকারত্ব। বিপ্লবের
আগুন নিভে যায় তৃষ্ণাতে।
গোপন গনতন্ত্রের তুমুল লালসায়, গোটা ভারত বিকিয়ে যায় …
এঁটো কাঁটা ছিবড়ে হয়ে পড়ে থাকি আমরা, বেবাক ভোটানুদাস !
৪)
চুরি আর ঘুসের টাকা ব্যবসায় লাগাবো বলে গল্পগ্রামে গেলাম।
বারসকালের সস্তা পচামাছের মত দেদার পতিত জমি ওই গ্রামে।
একলপ্তে সাতান্ন একর জমির হাতবদল তাজা তেলমাখা মুড়ির মত
বীজধানের চারার মত কিছু বিল্ডিঙের চারা রুইয়ে দিলাম ওই বাঁজাডাঙ্গালে
চাষিরা হাসছিল। দুই পকেটভরা নির্বোধ টাকার গরমে তখন অকাল নবান্ন।
বাঁজাডাঙ্গালে ভেলকি দেখালো হাইব্রিড বিল্ডিঙের শতেক চারা।
সতেজ বিল্ডিংগুলোর উচ্চতার ফলনে তখন ষাট-সত্তরের ফলন।
ফসল কেটে বাইরে বিক্রি করা নয় … ক্ষেতে রেখেই বিক্রি মানুষের কাছে
মানুষেরা ফসল কিনে ফসলের ভিতরেই ঢুকে যেতে থাকলো পরিবারসহ
ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে অবাক নবান্ন উৎসবে নানান ফসল সব মানুষ খেতে
লাগলো।
৫)
আজকাল মেসার্স ছায়া হোসিয়ারিতে ব্রা পাওয়া যায় না,
সেখানে বিভিন্ন রঙ ও সাইজের স্তন ঝুলে থাকে।
নীল দাম দিয়ে মেয়েরা তাদের অন্তর্বাসের মেধায় সুবিধাজনক বুক খুঁজে নিতে
আসে।
এদিকে হেমন্তের গোপন চিঠি গেল মেঘে-
বজ্রবিদ্যুত্সহ বছরের তিরাশিতম বীর্যপাত হল
গতকাল রাতে….
ভোরকে খিল্লি করে খবরের কাগজ উড়ে এলো তেতলার ব্যালকনিতে
পৃথিবীর প্রতিটি পাড়ার গৃহস্থ-বেশ্যালয় এবার
ছিমছাম শোবার ঘর হয়ে যাবে।
ভাঙা বোতল, রক্তাক্ত মেঝে, টুকরো কাপড়
ধর্ষিত জ্যোত্স্নাযোনির কষরক্ত ও কুয়াশা ভেজা সম্পর্ক
বেজন্মা শিশুর ছদ্মবেশে জীবন খুঁজে নেবে।
রোদ উঠলেই কান্নামোছা রুমালে স্পষ্ট হবে চকলেটের বাসি দাগ
রাস্তা পেরোতে বারবার দেখে নিতে হবে মেঘেদের চলন, রঙঢঙ
এরপর খাঁ খাঁ নির্জন দুপুর পেরিয়ে, ডাস্টবিনে কাক, কুকুরের সঙ্গে
মায়াবী বিকেলের বুক চিরে ফ্যাকাশে সন্ধে-আকাশ আর
অপলক চেয়ে থাকা নক্ষত্রমণ্ডলে তখন প্রকৃত স্খলনের চটচটে ইতিহাস।
আজ প্রতিটি মুখোশের ভিতরে বন্দি এক বিষাদ-মানুষ
বিষাদ-মানুষের বুকের ভিতরে অন্তরলীন একজন অসহায় ঈশ্বর।
৬)
কোনদিনই আমার পাহাড় কেনার শখ ছিলনা।
কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানতাম।
তার দরদাম আকার প্রকার সবই জানা ছিল আমার।
দূর থেকে বা কাছে গিয়ে ঘুরেফিরে মাঝেমাঝেই দেখতাম।
পাহাড় কেনার আগ্রহ কোনদিনই হয়নি কারণ
সেগুলো যে আদৌ কেনা যায় … সেটাই ঠিক জানা ছিলনা
আর জানতে পারলে সেটাই হয়তো পাহাড় সদৃশ হতো আমার কাছে।
আমার নিজস্ব একটা চৌবাচ্চা আছে, প্রায় একশো বছরের পুরনো।
কে সি নাগের অনেক অঙ্কের মকশো করেছি তাকে ঘিরে।
এখন আর জল ধরে রাখতে পারেনা সে। সারা গায়ের ফাটল চুইয়ে
গড়িয়ে যায় আক্ষেপ … একটা নদী না হতে পারার আক্ষেপ।
শুনেছি কেউ কেউ নাকি তার বদলে একটা পাহাড় রাখতে চেয়েছিলেন।
সমুদ্রের তর্জমা রাখতে চাই নতুনবাড়ির গৃহপ্রবেশে, ঢেউসহ। একটা
গোটা জাহাজের বন্দিশ ভেসে থাকুক সংকীর্তনের মতো, বসন্তের ব্যালকনিতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন