বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২

রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়

 

ছেলেধরা

 



সেই কোন ছেলেবেলার ঢাউস ঝোলা, ভেতরে ছোট ছোট ছেলে ভরা, কালো দোহারা চেহারা, বিগত কয়েক জন্মের অগোছালো দাড়ি, উদোম গা, লুঙ্গি, যদিও ভূতপূর্ব হয়ে তা এখন ল্যাঙট হয়েছে

 

আচ্ছা, কুকুরগুলো এত চিৎকার করে কেন?

 

দোতলার চিলেকোঠা ঘর, আমার স্টুডিও, ছোট জানলা দিয়ে নিচে তাকাই, চোখে পড়ে উপচে পড়া ডাস্টবিন, বন্ধুদের নজরে আসে না, তারা আসে, হাসে, গপ্পো মারে, মদও, জানলা, তাকায়, সামনে বাড়ি, বৌদির স্লিভলেস নাইটি, দ্যাখে, খোঁজে, নতুন ছবি নামালাম কিনা, হতাশ হয়, খিস্তি মারে, টলমল পায়ে রবীন্দ্রকলি  ছড়িয়ে ফিরে যায়,

 

সাদা ক্যানভাসের মুখোমুখি বসি, কিংবা ক্যানভাস আমার মুখোমুখি বসে, বসেই থাকি, দুজন দুজনের দিকে চেয়ে, একটা লাইনও তাকে দিতে পারি না, জানলা, নিচে তাকাই, ডাস্টবিন, সে আসে, তার বাঁ হাতের লাঠি কতকিছু সরায়, তার পিঠের ঢাউস ঝোলায় ছোট ছোট ছেলেপুলে ভরা আছে,

 

নেড়ি কুকুরগুলো এত চিৎকার করে কেন?

 

ইজেলে লটকে আছে ক্যানভাস, অনাবৃষ্টির দিনযাপন, বুকের গভীর থেকে অনবরতই উঠে আসে কষ্ট, কষ্টের দলা, ছবি আসে না

 

ফিরছি, কলেজ স্ট্রিট থেকে, মাঝদুপুর, পাড়ার নেড়ি কুকুরগুলো খুব চিল্লাচ্ছে, এত কাছ থেকে এই প্রথম তাকে দেখলাম, একই চেহারা, একইরকম দৃশ্য, তবুও আরও কিছু দেখার জন্য পাশের একটা গ্যারেজের আড়ালে চলে এলাম

 

নিয়মানুযায়ী সে বাঁ হাতের লাঠি দিয়ে ডাস্টবিনের এটা ওটা নাড়াচাড়া করছে, মনেহল, আজ কিছুই জুটলো না, কয়েক সেকেন্ড, এদিক ওদিক চেয়ে একটু জোরে হেঁটে তুলে নিল একটা মুখোশ, মুখোশে জমা ময়লা হাত দিয়ে পরিস্কার করলো, সযত্নে, লাঠি ও ঝোলা নামিয়ে মুখের ওপর চাপিয়ে নিল সেই মুখোশ, এখন তার বাঁ হাত কোমড়ে , ডান তর্জনী টানটান করে প্রায় তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘুরে যেন গোটা পাড়াটাকে সে আজ শাসন করছে, অথবা বুঝে নিতে চাইছে, এপাড়ায় আর কতগুলো ডাস্টবিন উপচে পড়ছে, কটা বেকার পুত্র বাপের ঘাড়ে চেপে আছে কোন কোন বাড়িতে ক'জন ছাঁটাই শ্রমিক রুগ্ন কারখানা বন্ধ মিল, কর্পোরেশনের জলের লাইন ঠিক কোথা দিয়ে যেতে পারে, প্রাইমারি স্কুল-এর খুব দরকার, ড্রেন দরকার? রাস্তা? একটা ভোটও যেন অন্যদিকে না যায়, দেখিয়ে দেব উন্নয়ন কাকে বলে

 

বাঁ হাতে তুলে নিল লাঠি, ডান হাত দিয়ে মস্ত ঝোলাটা ঝুলিয়ে নিল পিঠে, মুখোশটা মুখেই রইলো, রাক্ষসের মুখোশ, শান্ত,   ফিরে যাচ্ছে রাক্ষস, নাকি ছেলেধরা, ঝোলা ভরতি ছোট ছোট ছেলেপুলে, তাদের মগজ, চলে যাচ্ছে আমার ছেলেবেলার দিকে

 

স্টুডিওতে ফিরলাম, মুখোমুখি সাদা ক্যানভাস, প্যালেটে  উজাড় করে দিলাম কার্বন ব্ল্যাক-এর প্রায় পুরো টিউব, জানলা দিয়ে একবার নামলো চোখ, ডাস্টবিন

 

এ পাড়ার কুত্তার বাচ্চাগুলো শুধু চিৎকারই জানে

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদকের কলমে

মাস আসে মাস যায়। বছর গড়ায় বুলেট ট্রেনের গতিতে। নিরীহ মানুষ, হাভাতে মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ থাকে তার নির্দিষ্ট ঘূর্ণি আবর্তে। পৃথিবীর...