হত্যাকাণ্ড
প্রতিদিন আউড়ে যেতে হচ্ছে, ‘মরণ… তুহু মম মন প্রাণ হে’
জীবন কেবলই প্রতারণা করছে এই উষর সময়ে
চিরন্তন লোভ-লালসা আর চাওয়া-পাওয়ার
ধ্বস্তাধস্তি চলছে আবছা জ্যোৎস্নায়
মিথ্যে জিভ থেকেই সত্যের চ্যালেঞ্জ ফুঁড়ে
ঝলসে যাচ্ছে মানুষ ও তাঁর নানান শ্রেণীবিভাগ
তাদের কান্না শুনে বধির হয়ে যাচ্ছে কান
আনন্দে সাততলা অব্দি লাফিয়ে উঠছে জিভ
প্রেমিকার কষ্ট দেখে আনন্দে কেঁদে উঠেছিলাম
চুমু খেতে গিয়েও এখন আলজিভ শুকিয়ে আসে আমার।
চুম্বন যদি জীবন-নদীর উদ্দাম এক স্রোত হয়…
কাজের হিসেবে গতিবেগ আর মনখারাপের রাস্তায় থাকে
নানান নুড়ি-পাথরের ঢিবি।
চারিদিকে ভিজে স্যাঁতসেতে পেছল অন্ধকার থাকায়
আমি দানব… যিশু বুঝতে না পেরে…
টংলিং রেস্তোরায় ভিড় করেছে মেয়েমানুষেরা।
আজ আর কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না কেউ সরলভাবে হাঁটবার
সব রাস্তাই লুটিয়ে থাকে একলা হয়ে…
সব পাপোষের তলায় গড়িয়ে যায় ধুলোর ঝড়।
সময়ের ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে চলে সময়ের ধারাপাত।
সময়ের ধারাপাতে থাকে ভয়ংকর এক অর্থহীন শূন্যতা
শেষমেশ পিষে যাওয়া… মৃত্যু উপোসি হার্লে ডেভিডসনে।
অপমৃত্যুও ফেরারি হয়ে পালায় ভয়ে।
বুঝে গেছি মৃত্যু আদতে এক দমবন্ধ ভান
কেননা মৃত্যুর কাছে গিয়েছিলাম সরল চোখে
ভয়ে কুঁচকে গিয়েছিল তার চোখ
অন্ধ চোখ কেঁদে উঠেছিল মাথা নিচু করে,
খালি হাতে নির্জন রোদে ফিরতে হল… জটিল চোখে
নিজেকে নিজের থেকেও লুকিয়ে রাখতে পারছি না আর
আমার নপুংসকতা দেখে হেসে উঠেছিলে তুমি… আমার ভালবাসা।
আমায় ভালোবেসে ধরা পড়লেও ক্ষতি কিছু নেই
সেটিঙের গন্ধ নিয়ে উল্টোদিকে চলে যাবে হাওয়া
একারণে জনগণ হতে পারে খানিকটা আহত…
কাকস্য পরিবেদনা… আখেরে মিলে যাবে বাদী-বিবাদী
প্রশ্ন উঠবে… চাঁদ কি নিজে নিজেই জলে পড়েছিল?
প্রতারণা থেকে ভালবাসা আলাদা করতে পারছি না একদম
ভাবছি আমাদের প্রথম অভিসম্পাতের কথা…
ভাবছি আমাদের শেষ চুম্বনের কথা…
আমার দিব্যজ্যোতি… আমার অন্ধকার
চারধারে নক্রসুখ আর বেলেল্লাপনা চলছে মানুষের।
মানুষের ভাবনা আর ভালবাসায় কাৎ হয়ে ফিরে গেলাম ভয়ের কাছে
বাঁচার তাগিদে ফিরে এলাম আবার মগজের কাছ-বরাবর
ফালতু মগজের জ্যামিতিক অঙ্ক থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলাম বিশৃঙ্খলায়
সভ্যদের ঘৃণা করেও সভ্যতার কলকব্জায় লুকিয়ে থাকা
বদহজম থেকে তৈরি হল আমার বদরাগ
সমাজের ভুল চেতনা থেকে নিজেকে ঝুলিয়ে দিলাম শূন্যের আবহে
টেলিফোনের মধ্যে দিয়ে রোজ তিন কোটি চুমু
এপার-ওপার করছে পৃথিবীময়…
সিটি কেবলের নরম তার বেয়ে উড়ে যাচ্ছে ৭৪ কোটি মাছি
আর আমার শরীরের চারিদিকে এখন অসংখ্য 'টোপ'।
অসংখ্য 'টোপ'-এর মাঝেই সন্ধ্যা নামে রেসকোর্স মাঠে।
বাজির এপারে ঘোড়ার ক্ষুরের ধুলো,
ওপারে নক্ষত্রকুকুর…
ভাবি দেখা হবে রণক্ষেত্রে।
একবারও নিজের দিকে তাকাতে পারছি না ফিরে
ফালতু অব্যবহার্য হয়ে কুঁকড়ে শুয়ে আছি বমিওঠা চোখে
মগজে চোলাই কারবার চলছে গুপ্ত ক্ষমতার
কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে লালা ওরফে ভালবাসা… অসহায়তা
রক্তাক্ত পেঁজা শরীরের পাহাড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে
অক্ষম আর অনুর্বর এক অবাক স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার ক্ষীণ শরীর বেয়ে… শরীর ঘিরে এক উষ্ণস্রোত বয়ে চলেছে
অসংখ্য বিশৃঙ্খল শৃঙ্খলায় সাজানো এই বহমানতা
সারাক্ষণ স্পর্শের ইচ্ছে সংক্ষিপ্ততর হতে পারতো…
যৌনতা নয়… বেশ্যাসঙ্গীত নয়… একা কাঙাল এক বসে থাকে
একদিন ঠিক এই অলৌকিক একাকীত্ব
দাহকাজ সমাধা করবে তার।
খুব দূর থেকে দেখি এই হত্যাকাণ্ড…
আসলে এই মহাবিশ্বে আমরা কেউ কাউকে
ছেড়ে যাই না কখনও, জীবনের ছোট-ছোট ঘরে
সব অভিমান… অপমান… প্রেম সয়ে সয়ে রয়ে যায়।
অভিমান… অপমান… প্রেম রয়ে সয়ে থাকে জীবন আয়নায়
স্ব-যাপনে একলা ঘুরলেও শুধু তোমার কথাই মনে পড়ে
বটপাতা মুখ আমার, চোরের মত চোখ… রক্তে ভরে যায়।
সর্বদাই বর্তমান আমায় লুফে নেয়
অথচ যেতে চাই ইতিহাসে…
এভাবেই বদলে যায় এক একরকম উপস্থিতি
প্রতিবারই আমার আমিকে অন্যভাবে প্রকাশ করি
কিন্তু জল একদিন নিজেকেই গিলে নেয়।
একটি স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য…
বেশ কিছু সময় হয়তো জলমগ্ন জীবনে বেঁচে থাকতে হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন