আমাকে দেখুন
এই আমাকে দেখুন আধুনিক হতে গিয়ে আমি এখনও সেই পুরোণো হারকিউলেসে
যার প্যাডেল খুলে পড়ে গেছে চৌরাস্তায়
কোনরকমে ঠেলেঠুলে আমলৌকা এস এন ব্যানার্জি পেরিয়ে তিলক রোডের আটের চব্বিশে
তার মধ্যেই বার চারেক খুলে গেছে চেন
ঢিলেঢালা ব্রেক নিয়ে পৌঁছে গেছি অবশেষে
প্রতিটি আটটা সাতটা টাইমপিসে নিত্যযাত্রীর তেলচিটে ব্যাগ নিয়ে
দাঁড়ভাঙা চিরুণি টুথব্রাশ দাঁতের মাজন
বাঁকুড়ার চার বাই তিন তোয়ালে গা্মছা ইত্যাদি
অনেকগুলো রোটারি পেরিয়ে সেই কোলফিল্ড কয়লাধূলোর রোড লেভেলক্রসিংয়ে আটকে থাকা হৃদপিন্ড নিয়ে ছুটে গেছি অফিস করণিকের দপ্তরে
স্টিল টাউনসিপ থেকে এক কুড়ি চার কিলোমিটার দূরে
ফুসফুসে আটকে গেছে কার্বন সিলিকোসিসের অণু পরমাণু
ক্রমে ক্রমে কেটে গেছে ষোলো ইনটু তিনশো পঁয়ষট্টির দিনের সালতামামি
কলিয়ারির চানক টবগাড়ি বেষ্টিত লোহার বেড়ি
চিমনির ভোঁ
এইসব পরিক্রমণ সেরে যখন থিতু হলাম বাণিজ্যিক শহরে
সাহিত্য সহবাসে কেটে যাচ্ছে সুশীল দিশারী হীরক নিখিল রাজীব কাকলির কাব্য অনুষঙ্গে
নয়নের আঠারো লাইনের রূপকল্পে
অমিত অরণ্যার কবিতার মায়াজালে
অলক্তিকার শব্দের মেটাফরে আত্মিক অনুভবে
আহা, এখানে জমে আছি বেশ বরফজমাটে শপিংমলে ফ্লুরোসেন্টের জাফরানি আলোয়
এখানে আমাকে সবুজ নয় বাদামি দ্যাখায় নাইলনের চেয়ারে
সে্ঁটে থাকি শ্রাবণে রিমঝিমে ও হেমন্তের অরণ্যে বসন্তের সোচ্চার পলাশ কিংশুকে
গ্রীষ্মের ভরদুপুরে ও ডিসেম্বরের শীতার্ত তোষক লেপে
জানিয়ে রাখি আমিও দু চার কলম লিখি
খুঁটে খাই অক্ষরের দানা
চর্ব্য চোষ্য অবশেষে বর্জ্য পড়ে থাকে কবিতা আবাসনে
যাপনের রঙেচঙে ফ্যাকাসে কিছু স্টিলজাত ছাই
আমাতে বর্তায়
ছাই মেখে বসে থাকি বহুরূপি হয়ে কবিমুখের বহতা গরলে
আমি এখানে নদী খুঁজি স্রোত খুঁজি
ইচ্ছা হয় বয়ে যাই স্রোতস্বিনী হয়ে
গালে হাত দিয়ে ভাবি সব্যসাচী মণিশংকর
কে তিনি একই হাতে ভাস্কর কালু ডোম লোহার
পিনাকীর কবিতা কথকতা নিজামের নজরুল- কথা
কিভাবে ছুঁতে পারি ওইসব মেহগিনি টিকউডের দারুণ আসবাব
আমি যে আকর্ষহীন সামান্য গুল্মলতা
গোড়াতে সার ও জল চায় মাটির দোঁয়াশ
একা একা সেঁটে থাকি এঁটেলের দায়ে
জল ধরে রাখার পাশাপাশি উর্বরে নিমিত্ত ছোঁয়াচ
অন্তরীণে একাকি গুনগুনে গানের গুঞ্জনে মাথা দোলাই
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন