শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪

অমিতাভ দত্ত



ভালোবাসা 


সেদিন তুমি লাজ-হীন, রোদ্দুরে ভরা বুক,

পৃথিবী তো রয়েইছে তোমার জন্য উন্মুখ -


ওষ্ঠ ছোঁয় পৌষের মেঘ, নও তো জড়োসড়ো

দু'চোখে আগুন, উঃ শরীর কাঁপে থরোথরো


মধু জমে জানু সন্ধিতে অস্থির অস্থি-ভূমি,

অরণ্য গর্ভে লাফালো ঝড় দ্রাক্ষারস চুমি,


শৌর্য ভাসে স্নানে কিন্নরী কায়া মাদল-দোল,

উষ্ণ তুমি নক্ষত্র-মুখী, বৃন্তে তুরীয় বোল,


সেদিন তুমি লাজ-হীন, রোদ্দুরে ভরা বুক,

পৃথিবী তো রয়েইছে তোমার জন্য উন্মুখ -



চুমু 


একটি শপশপে কাকভেজা চুমু খাবো বলে সকাল থেকে হত্যে দিয়ে পড়ে আছি,


সাতপাঁচ না ভেবে নদীর কাছে যেতে না যেতেই সে কিছুটা বিরক্তি দেখিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো,


পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সবে ভাবতে বসেছি যখন, কথাটা পাড়বো কিনা -

সে না-জানি আমার অভিসন্ধি বুঝে বিশাল বপু দেখিয়ে বললো, "মরণ"


চৈত্রের কিছু শুকনো পাতা উস্কোখুস্কো হয়ে হাত-পা ছড়িয়ে উড়ছিলো চারদিকে, 

আমি দু-পা বাড়াতেই তারা আমার দৈন্যদশা দেখে দিলো পিঠটান - 


শুধু অ-আ-ক-খ না-জানা একটি শিশু হেলতে-দুলতে বীরদর্পে এগিয়ে এলো,

তার চোখে পূর্বজন্মের খিদে,

তার পরনে কোনও আব্রু নেই,

ধূলো মাখা সারা শরীরে হিয়েরোগ্লিফিক্সের সৌন্দর্য্য,


সে বাড়িয়ে দিলো দুটো-হাত,

আমার সর্বাঙ্গে তখন প্রবাল দ্বীপের আলো।



মুহূর্ত


দু-মুঠো ভাত সেদ্ধ হলো কিনা জানাও, কাঁকর থাকলেও ক্ষতি নেই -


শাক-চচ্চড়ি রেঁধো, ঘন হলে একটু যেনো অমাবস্যা লেগে থাকে -


মাছের ঝোল পক্ক হলে কাঁচা লঙ্কা চিরে দিতে ভুলোনা,


এই সব তুচ্ছ খড়কুটো নিয়েই রেলগাড়িতে চাপবো - সে ছুটবে কৃত্তিকা নক্ষত্রের দিকে,


ওখানে চোখের জলে কবিতারা স্নান করে,

শরীরের গনগনে আঁচে পুড়তে ছুটে আসে নিরম্বু মেঘ,


ভেবোনা - তোমার জন্যও কিছু শব্দ বুক পকেটে রেখে দেবো,

আমি ঘুমোলে উল্কার মতো যারা আছড়ে পড়বে মহাজাগতিক বারান্দায় -



সমুদ্র ও একটি মেয়ে


ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে পূর্ব আফ্রিকার সারি সারি ক্ষুধার্ত শরণার্থী ইউরোপে পা রাখলো,


পোল্যান্ড দেখলো - ঝাঁকড়া চুলের একজনের পেটে  ঠুসে দেওয়া হয়েছে সুদান ও লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ,

অস্ট্রিয়া দেখলো - ছেঁড়া রংচটা পোশাকে জবুথবু একজনের চোখে নীলনদের জল,

হাঙ্গেরী দেখলো - একটা মাঝ বয়সী বুড়ো পিঠে মস্ত ঝোলা নিয়ে তার দেশ 'উগান্ডা' বয়ে নিয়ে এসেছে,

পর্তুগাল ও স্পেন ঠিক কি দেখা উচিৎ বা উচিৎ নয় - সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চোখ আর তুললো না,

ইতালী দেখলো - পুরো পেনিসুলা জুড়ে পিঁপড়ের সারির মতন আরো মিছিল আসছে,


একটি মেয়ে,

একটি মেয়ে যে লুকিয়ে পড়েছে আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী,

একটি মেয়ে যে দেখেছে বার্লিনের প্রাচীরে গ্রাফিতি শিল্প ও পূর্ব দিকে লুইসেনস্টেড খালের বক্ররেখা,

একটি মেয়ে যার বাবা শুনিয়েছে সার্ব, ক্রোট ও স্লোভেন'দের গৃহযুদ্ধ,

একটি মেয়ে যার হাতে ছিল রেনেসাঁ যুগের একখানি বিবর্ণ কলম -


সে ধীর পায়ে সেই বুভুক্ষু মানুষদের সামনে এলো,


পোল্যান্ড চোখ নামিয়ে নিলো

অস্ট্রিয়া'ও চোখ তুলে তাকালো না,

হাঙ্গেরী নির্বাক,

এবং পর্যায়ক্রমে পর্তুগাল ও স্পেন


দুঃখগুলোর কোনো আলাদা রং হয়না - সবই ভরাট আকাশের গর্ভে থাকা নীল,

খিদের নির্দিষ্ট কোনো মহাদেশ নেই - মাপুচে ও জুলুরা এক হাঁড়িতেই পাশাপাশি অভুক্ত থাকে,

সেই মেয়েটি চোখে চোখ রেখে বললো - 

আমি তোমাদের সঙ্গে একটু কাঁদবো বলে এসেছি,


বর্ণহীন জলের ফোঁটাগুলো কি এক হয়ে পারেনা - 

আস্ত আটলান্টিক হয়ে ইউরোপের সব ঘরে ঘরে পৌঁছে যেতে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদকের কলমে

মাস আসে মাস যায়। বছর গড়ায় বুলেট ট্রেনের গতিতে। নিরীহ মানুষ, হাভাতে মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ থাকে তার নির্দিষ্ট ঘূর্ণি আবর্তে। পৃথিবীর...