শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪

মহম্মদ আনওয়ারুল কবীর

 




অব্যক্ত


গভীর রাত। ওয়াড্রোব খুলে ভদ্রমহিলা আলতো করে স্পর্শ করেন সযত্নে রাখা ছোট্ট ছোট্ট জামা, মিকিমাউজের ছবি আঁকা একটি ফিডার আর ছোট্ট একজোড়া লাল জুতা। বেলকনি থেকে সিগারেটে সুখটান দিয়ে রুমে ঢুকেন ভদ্রলোক। স্ত্রীর পিঠে হাত রাখেন। সজল চোখে দুজন দুজনের দিকে চেয়ে থাকেন। কেউ কাউকে সান্ত্বনা দিতে পারেন না। জানালার ফাঁক গলে হঠাৎ দুজনের চোখে পড়ে দূর-আকাশের মিটিমিটি তারা।




সময়চাবুক


নিশুতি রাত। ভেসে আসছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। টিনের চালে শুনা যাচ্ছে পাতা ঝরার মর্মর।


বাড়ির সবাই ঘুমে, ওরা দুজন ছাড়া। চলছে ওদের টুকরো টুকরো রাতের কথা।

- আজ একটু অন্যভাবে ...

- কীভাবে?

-এই যে দ্যাখো ...

-ধ্যাত

একসময় শীৎকারে ঢাকা পড়ে যায় কথোপকথন।


প্রপিতামহের দেয়ালঘড়িটা ওদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, 'সময়চাবুকে একদিন তোমাদের জোশও




মাশাআল্লাহ


হুজুর- জীবজন্তুর ছবি আঁকতে নেই! ছবিতে তো আর জান দিতে পারবা না- এজন্যই তো আল্লাহ প্রাণীর ছবি আঁকতে নিষেধ করেছেন।

চিত্রকর- ছবিতে আমি জান দিতে পারি না ঠিকই কিন্তু প্রাণ দিতে পারি। এই যে দেখুন আমার আঁকা ...


হুজুর ক্যানভাসে আঁকা নারীর শৈল্পিক উদোম তৈলচিত্রে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে উচ্চারিত হয় - মাশাআল্লাহ!



ঈর্ষা

- এই,ফেইসবুকে  তোমার কবিতায় মেয়েদের এতো কমেন্ট আর লাইক কেন?

-  তাতে কী হয়েছে? মেয়েরা হয়তো আমার লেখা পছন্দ করে ...

- যত্তসব! আমি বুঝি না, কবিতা দিয়েই তুমি কচি থেকে বুড়ি-ধাড়ি সব মেয়েদের মাথা চিবিয়ে খাচ্ছো। তোমাকে আমি চিনি না! ...

- কী যা তা বলছো!

- আমাকে খুকি ভাবছো! ছোঁক ছোঁক করা ঐ  মেয়েরা প্রথমে  কবিতা ভালোবাসবে, তারপর কবিকে ভালোবাসবে, এরপর শুরু করবে টানাটানি। আজ থেকে কোন কবিতা পোষ্ট করতে পারবে না তুমি!


মাইয়া মানুষ


বাদল এক দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে খবর দেয়-


- বাজান, বাজান, আমাগোর পাটক্ষেতে একজন মানুষ মইরা পইড়া আছে, এহনই দেইখ্যা আইলাম।

- কী কস তুই, চল্ তো দেহি ......


রহমত মিঞা ছেলের হাত ধরে বাড়ির পিছনে পাটক্ষেতে যায়। বাদল পাটক্ষেতে আঙুল দিয়ে দেখায়, " ঐ যে দেহো, মানুষটা মইরা আছে।" বাদলের আঙুল অনুসরণ করে রহমত মিঞা পাটগাছের ঝোপের আড়ালে এক মহিলার লাশ দেখে। কাছে গিয়ে নীরিক্ষণ শুরু করে।


সাদা পেটিকোটে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। ছেঁড়া ব্লাউজ গলিয়ে স্তনযুগল বেরিয়ে এসেছে। স্পষ্টতঃই নখের আঁচড় দেখা যাচ্ছে। নিথর দেহ। অনেক আগেই মারা গেছে বোঝা যায়। নাহ, পরিচিত কেউ না !


রহমত মিঞা এবার  দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেকে বলে, "হ্যা রে, মানুষ দেহোস কই তুই? এইডা তো মাইয়া মানুষ!"


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সম্পাদকের কলমে

মাস আসে মাস যায়। বছর গড়ায় বুলেট ট্রেনের গতিতে। নিরীহ মানুষ, হাভাতে মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ থাকে তার নির্দিষ্ট ঘূর্ণি আবর্তে। পৃথিবীর...