পথ ভোলা
অন্য দিনের তুলনায় ঠান্ডাটা কী আজ একটু বেশি ? জ্যাকেটের চেনটা গলা অবধি টেনে দিতে দিতে ভাবছিলো সে।
ওই দিকের বেডরুমে মা, ডিনার শেষে ওষুধ বিষুধ খেয়ে শুয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। কাজের মেয়েটি যথাসময়ে, মায়ের বিছানা ঝেড়েঝুড়ে, লেপের নীচে হটব্যাগ দিয়ে আরামপ্রদ করে রাখে। বিহার ঘেঁষা এই অঞ্চলের ঠান্ডাটা মায়ের ঠিক সহ্য হয় না। রজত বলেছিল শীতকালটা কলকাতায় কাটিয়ে আসতে, কিন্তু মায়ের বোধহয় ওখানে একা একা মন টিঁকছিলো না।
কলকাতাবাসিনী,বন্ধুবান্ধব পরিবৃতা মা, আগে তাঁর তথাকথিত সমাজসেবা,পার্টি, পিকনিক,ছেড়ে অন্যত্র
থাকার কথা ভাবতেই পারতো না। আর এখন! সেই সব সঙ্গীসাথীর দল কোথায় যে উধাও হলো কে জানে। বাবার আচমকাই চলে যাবার পর ধীরে ধীরে সব ফাঁকা হতে থাকছিলো। কারণটা ঠিক বোঝা গেল না। সে কী বাবার পদমর্যাদার গৌরব অন্তর্হিত হওয়া না কি অর্থকৌলীন্যে কিঞ্চিৎ টান! আসলে প্রকৃত বন্ধু বলতে যা বোঝায়, মায়ের তা কোনদিনই ছিলো না। যা কিছু সবই বাবার দৌলতে। বাবার পদমর্যাদার, কৃত্রিম আলোতেই আলোকিত থাকতো মা। ফলে মধুজালিকায় মধুর টান পড়তেই মধুমক্ষিকার দল উড়ে গিয়ে অন্য চাকে বসলো।
আরোপিত গ্ল্যামারের স্পটলাইটে ভাসতে গিয়ে, কতো যে ক্ষতি করে ফেললো মা, কেবল নিজের নয়, একমাত্র সন্তান রজতেরও..,বুঝতেই পারলো না,হীরের বদলে স্রেফ কাচের টুকরোই আঁচলে বেঁধেছে। যখন বুঝলো তখন অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
রজতের ভবিষ্যত জীবন নিয়ে আজকাল মায়ের
হা হুতাশের অন্ত নেই , কিন্তু সব ভুল কী আর শোধরানোর!
এই চল্লিশের কোঠায় পা দেওয়া রজতও আর এইসব নিয়ে ভাবতে চায় না। নতুন করে সমস্যা তৈরি করে কী লাভ! বরং নিজের চাকরি বাকরি, বইপত্র, গান , একটু আধটু লেখালেখি এইসব নিয়ে, নিজেকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়ে মোটামুটিভাবে ভালোই আছে সে। একটাই তো জীবন। একটু স্বস্তিতে কাটানোর অধিকার তো সকলেরই আছে। এছাড়া জীবনের চড়াই উতরাই পার হতে, মনখারাপের সঙ্গী হয়ে রবীন্দ্রনাথ তো রইলেনই আজীবন।
ভাগ্যিস সেই ছেলেবেলাতেই বাবা এই পথের হদিস দিয়ে গেছেন।
রবীন্দ্রসংগীতটা সে খুব মন দিয়েই শিখেছিলো। ফলে শুধু রবীন্দ্রসংগীতের বাণীই তার উত্তরণের দিশারী।
"এই ঠান্ডায় না বেরোলেই নয়?" মায়ের গলা..
"এই তো এখুনি ফিরে আসবো , সামান্য একটু না হাঁটলে ঘুমটা ঠিক হয় না!"
স্বাস্থ্য রক্ষার্থে নিয়ম করে হাঁটাটা রজতের ডেইলি রুটিন , আর আজ তো অদ্ভুত এক অস্থিরতা, ভর করেছে তার উপরে!
বাংলোর বাগান, গেট, ওয়াচম্যানের সেলাম, পেরিয়ে, রাস্তায় পা রাখলো রজত।
শীতের রাতে পথ এখন শুনশান।
গোল টুপি পরা সারিসারি পথবাতি, যেন নিজেদের পাদদেশটুকুই আলোকিত রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত। বৃত্তের বাইরে বাকিটুকু আলোছায়ার মায়া।
অদূরে কুয়াশা পাক খায়। সামনে অষ্পষ্ট পথের ইঙ্গিত, অনেকটা তার নিজের জীবনের মতোই। যখনই মনে হয়, সামনেই আলোকোজ্জ্বল সরণি,পরমুহূর্তেই, সবকিছু ঝাপসা, এলোমেলো, দিশাহীন।
জ্যাকেটের পকেটে রাখা হাতদুটো ঠান্ডায় কালিয়ে যাচ্ছে, রজত তবু ঘোরের মধ্যে হেঁটেই চলেছিলো।
মনটা আজ তার বড্ড উচাটন। বহুকাল বাদে সেই ভোলা দিনের সৌরভ, আজ আবার বারেবারে আনমনা করে ফেলছিল তাকে।
সকাল বেলা অফিস যাবার আগে, সে তখন ব্রেকফাষ্ট টেবিলে, মা সামনের ঘরে টিভি রিমোটের বোতাম টিপছিলো, একটি চ্যানেলের আমন্ত্রণে নামজাদা শিল্পী গাইছিলেন, রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্যায়ের গান..
কত যুগের ওপার থেকে, মনের নিভৃতে লুকিয়ে থাকা গানটা,
ঝাঁপিয়ে এসে পড়লো চেতনায় ,আমূল নাড়া দিলো রজতের সমগ্র সত্ত্বাকে...
সেই কবে যেন একজন, মগ্ন হয়ে গেয়েছিলো "মিলাবো নয়ন তব নয়নের সাথে... "
বাড়ি ফিরেই মা রাগে ফেটে পড়েছিলো,
" ছিঃ, এই বেহায়া মেয়ের সঙ্গে কিছুতেই ছেলের বিয়ে দেবো না আমি,
গাছে না উঠতেই এক কাঁদি। কোথাকার কোন স্কুলমাষ্টারের মেয়ের সাহসখানা দেখো, আমার হীরের টুকরো ছেলের দিকে হাত বাড়ানোর আস্পদ্দা তোদের হয় কী করে! পাত্রকে দেখেই গান ধরলো চোখে চোখ মেলাবে, ছিঃ।"
বাবা অনেক বুঝিয়েছিলো ----
"ওটা রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্যায়ের গান, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে গাওয়া, তোমার ছেলের উদ্দেশ্যে নয়।"
কিন্তু মা সেকথা মানলে তো।
মায়ের ধারণা সব মেয়েরাই ছেলেধরা।
রজতের কিন্তু বেশ লেগেছিলো স্নিগ্ধ প্রকৃতির ভদ্র মেয়েটিকে,তার চাইতেও বেশি ছুঁয়ে গিয়েছিলো তার গান। নিখুঁত উচ্চারণ এবং সুরে রবীন্দ্রনাথের বাণী যেন ছুঁয়ে যাচ্ছিল জীবনদেবতার চরণ।উজ্জ্বল হয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছিলো সেইদিনের সকালটা।
ওই মেয়েটিকে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পেলে আজ তার জীবনটা অন্য খাতে বইতো সন্দেহ নেই!
সেদিন মায়ের কথার বিরুদ্ধে যাবার মতো ব্যক্তিত্ব তার ছিলো না।ব্যক্তিত্ব না-কি ভালোবাসা! একমাত্র সন্তানই যে মায়ের চরম দুর্বলতা,সে কথা তো অনস্বীকার্য। জেনে বুঝে একটি অচেনা মেয়ের জন্য মায়ের মনে আঘাত দিয়ে উঠতে পারেনি রজত।
কবেই তো চুকে বুকে গেছে সবকিছু, তবু মনের বাসায় কেন যে, আজও তার গোপন পদসঞ্চার কে জানে! মনের হদিশ কে কবে পেয়েছে!
মা অবশ্য এইসবের ধার ধারেন নি কোনওদিন। অতি সাধারণ পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা মায়ের ধ্যানজ্ঞানই ছিলো অর্থ আর প্রতিপত্তি।
রূপের জোরে, বাবার মতো উচ্চপদস্থ চাকুরের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাওয়া মা, দিনে দিনে আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠছিলো। অবস্থায় এবং প্রতিপত্তিতে সমতুল না হলে মা কাউকে কোনদিন পাত্তাই দেয় নি।
সেদিনও তাই অন্য কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে ওই মেয়েটিকে সরাসরি বাতিল করতে বাধে নি মায়ের। হয়তো বা সেই খেসারতই, জীবনভর দিয়ে যেতে হলো রজতকে।
নিজের উপরে করুণাই হয় তার।
সরকারি গাড়ি, প্রশস্ত বাংলো, উঠতে বসতে সেলাম। সেই রজতকে নিয়ে ভাগ্য কীভাবে হেলায় ছিনিমিনি খেললো ! সব কিছু থেকেও আজ সে একেবারেই একা।
রজতের মতো সুপাত্রের জন্য মেলা সম্বন্ধ এসেছে বৈকি। বাংলাদেশে কি আর পাত্রীর অভাব ! ওই ঘটনার পর থেকেই মা সতর্ক হয়ে গিয়েছিল। আগে যথেষ্ট খোঁজ খবর নিয়ে তবেই অগ্রসর হতো। মায়ের দাঁড়িপাল্লায় যথেষ্ট ওজনদার না হলে মা আর এগোতোই না। বাবা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করতো, কিন্তু কিছুতেই তর্কে এঁটে উঠতো না। এই প্রহসনে রজত আর নিজেকে জড়ায় নি।
ফলে সেই মল্লিকা নামের মেয়েটিকেই তার প্রথম এবং শেষ দেখতে যাওয়া। তাই বোধহয় খুব সঙ্গোপনে আজও মনের মধ্যে তার আনাগোনা।
হ্যাঁ, বিয়ে,তারও একটা হয়েছিল বৈকি, মায়ের পছন্দসই পাত্রীর সঙ্গেই।
সে ছিল বিশাল বড়লোকের কোনও এক উড়নচন্ডী মেয়ে। সেধে সম্বন্ধ আসতেই মা আগুপিছু না ভেবে সাগ্রহে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। বাবার ঘোরতর আপত্তিও মাকে টলাতে পারে নি।
আসলে ছেলের বউ নয়, মায়ের দরকার ছিলো উপরতলায় ওঠবার সিঁড়ি।
যথাসময়ে নাম কা ওয়াস্তে বিয়েটাও হয়েছিল , তবে টেঁকেনি। একটাই সান্ত্বনা, মেয়েটি তাকে ঠকায় নি। ফুলশয্যার রাতেই সে, রজতকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলো, সে অন্য কাউকে ভালবাসে, এবং তার সন্তানের মা হতে চলেছে । একজন হিপির সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সহবাস। ছেলেটির ভিসা খতম, বলে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছে, তবে সে ফিরলেই ইত্যাদি ইত্যাদি...এবং সত্যি সত্যি কয়েকদিনের মধ্যেই সে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
এত সহজেই তাকে রেহাই দেবার জন্য রজত তার কাছে কৃতজ্ঞ। তারপর আর কোনো ফাঁদেই পা দেয় নি সে। অনুরোধ উপরোধ ব্যর্থ হয়ে অবশেষে মা ক্ষান্তি দিয়েছে।
লাভ হয়েছিল কেবল মায়ের তথাকথিত সোসাইটির। মুচমুচে তেলে ভাজার মতো বিষয় কী আর রোজ মেলে!
অফিসে আজ সারাদিন প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে রজতের। ছোট বড়ো মিশিয়ে পরপর চার পাঁচটা মিটিং ছিল। লাঞ্চ খেতেও দেরী হয়ে গিয়েছিল তাই।
সেকেন্ড হাফে সে নিজেই তার বস, নতুন জেলা শাসকের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিলো কিছুক্ষণ। কর্মসূত্রে বস হলেও, বয়সে রজতের কাছাকাছি, বেশ সজ্জন ও আলাপী মানুষ বলেই মনে হয়েছে।
আজ ফোন করার একটা বিশেষ কারণ ছিলো। তাদের এই ছোট শহরের প্রান্তে বিস্তীর্ণ এক শালবনের মাঝে খানিকটা ফাঁকা জায়গায়, স্কাউট ও গাইডদের দিন তিনেকের ক্যাম্প চলছে। সারি সারি তাঁবুতে বাচ্চারা থাকছে, খেলাধুলার পাশাপাশি তাদের নানা ধরনের ট্রেনিংও দেওয়া চলছে। রজত একদিন সময় করে গিয়ে সবকিছু দেখেও এসেছে। বাচ্চা বয়সে এই ধরনের ট্রেনিং বেশ কার্যকরী , বাচ্চারাও খুব এনজয় করে সন্দেহ নেই , সবচেয়ে বড়ো কথা ওরা সবাই সবার সঙ্গে মিশতে শেখে।আজকের এই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে শিশুদের জন্য যেটা খুবই জরুরি।
আগামী কালই শেষ দিন। ক্লোজিং সেরিমনিতে অনেকেই আমন্ত্রিত। সে তো বটেই জেলাশাসকও আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। সেই বিষয়ে কিছু কথাবার্তা সেরে নেওয়ার ছিল।
রাস্তার পাশের ঝোপঝাড় থেকে ঝিঁঝি পোকার ডাক মাঝে মাঝে তীব্রতর হচ্ছে, ঘুমন্ত পাখির বাসা থেকে পাখির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ। গাছের পাতা বেয়ে কুয়াশা নামছে ঝোপেঝাড়ে মাঠে ঘাটে । কতটা পথ চলে এসেছে রজত, খেয়ালই নেই।
হঠাৎ সম্বিত ফিরলো দূর থেকে ভেসে আসা মালগাড়ির হুইসিলে। কোথায় চলেছে কোন অজানায়, যাবার পথে বুঝি ডাক দিয়ে যায়! কিন্তু রজতের তো আর যাবার নেই কোথাও, তাকে তো ফিরতেই হবে!
আচমকা সামনের কুয়াশার ভেতর থেকে গাড়ির জোরালো আলো পথে এসে পড়লো।
কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে গেল সেটি। পুলিশের গাড়ি। রজতকে দেখেই চিনেছে।
" স্যার এতো রাতে এদিকে?"
রজত জবাব হাতড়াচ্ছিলো।
বুঝেছি, ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছেন। চিন্তা করবেন না স্যার। এইমাত্র দেখে এলাম। সব ঠিকঠাক আছে। এতোগুলো বাচ্চা ছেলেপুলের সিকিউরিটির দায়িত্ব আমাদের উপরে। সোজা কথা! এতো বড়ো ক্যাম্প, এর আগে এই তল্লাটে কোনও দিন হয় নি।
নতুন ডি,এম স্যারও আগামীকাল সমাপ্তি অনুষ্ঠানে নাকি সস্ত্রীক উপস্থিত থাকবেন! আপনিও আসবেন তো ? "
মাথা হেলাল রজত।
জেলার দন্ডমুন্ডের কর্তা, তার নতুন বস্ আসছে, তার না গেলে চলে! হলেই বা ছুটির দিন। তাছাড়া ছোটো ছোটো বাচ্চাদের অনুষ্ঠান , মাকেও নিয়ে যাবে না হয়।ভালো লাগবে মায়ের, একা ঘরেই তো থাকে।
"ফিরলি? আজ এতো দেরি করলি যে?"---মায়ের উদ্বিগ্ন গলা।
" ঘুমোও নি? "
"তুই না ফিরলে... "
"ওই মানে একটু... স্যরি"
খারাপ লাগছিল রজতের, ঈশ্ কী যে হয়েছে আজ, নিজের কথা ভাবতে ভাবতে মায়ের কথা একেবারে ভুলেই বসেছিল! মায়েরই বা আর কে আছে সে ছাড়া!
এতক্ষণ মাকে দোষারোপ করতে করতে হুঁশ হারিয়ে ফেলেছিল বুঝি।
তাছাড়া মাকেই বা একা কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে কেন। নিজে তো আর কচি খোকাটি ছিল না। উপযুক্ত চাকরি বাকরি করা পুরুষ মানুষ! অনায়াসেই মায়ের কথার প্রতিবাদ করে, নিজের সিদ্ধান্ত জানাতেই পারতো, না-কি তারও আর পাঁচটা দোকান ঘুরে দেখার মনোবৃত্তি কাজ করেছিলো! কে জানে, নিজেকে চেনাও কী অতো সহজ!
আত্মবিশ্লেষণের ভাবনা ক্রমশ আত্মসমালোচনায় পর্যবসিত হতে হতে গভীর নিদ্রায় ডুবে গেল সে।
পরদিন সকালটা বেশ রোদ ঝলমলে। ঠান্ডাটাও এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গেছে। চটপট তৈরি হয়ে মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে। ডি.এম আসার আগেই পৌঁছনো দরকার।
মাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে অভ্যর্থনা কমিটির দলে এসে যোগ দিলো সে।
যথাসময়ে ডি এম, সস্ত্রীক এসে পৌঁছে গেলেন, নমস্কার করে অধ্যাপিকা স্ত্রীর সঙ্গে, সকলের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন।
প্রতিনমস্কার জানাতে গিয়ে, রজত স্থানুবৎ । মল্লিকা!! এ যে সেই মল্লিকা! কী চমৎকার ঋজু টানটান! সতেজ রজনীগন্ধার মতো তরতাজা অনুপম, আজো যার ভাবনা তাকে বিচলিত করে!!
নির্দিষ্ট কার্যক্রম শেষে সমাপ্তি অনুষ্ঠান। কর্মকর্তাদের সনির্বন্ধ অনুরোধে ,ডি.এম সাহেব স্টেজে উঠলেন, তিনি নাকি একজন সুগায়কও। সঙ্গে ডেকে নিলেন
তাঁর গায়িকা স্ত্রীকেও। সমবেত কন্ঠে, শিশুদের উদ্দেশ্যে, সহাস্য মুখে গান ধরলেন তাঁরা....
"আমরা এমনই এসে ভেসে যাই, আলোর মতন হাসির মতন, কুসুমগন্ধ রাশির মতন.... "
শালবনের মধ্যে দিয়ে সূর্যাস্তের রঙিন আলোর মাঝে সেই সুর, আনন্দের লহরী তুলে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো সমস্ত শ্রোতাদের মন।
পাংশু মুখে মা, জিজ্ঞাসু চোখে চাইলেন রজতের মুখের দিকে।
মাথা নীচু করে রজত বললো---
"হ্যাঁ ।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন